নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ৮ জুলাই:
পাহাড়ি জনজাতি এলাকাগুলোতে আবারও ছড়িয়ে পড়ছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। বিশেষত তেলিয়ামুড়া মহকুমার অন্তর্গত মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের বিলাইহাম রিয়াং পাড়া, বড়মুড়া পাহাড়, তীর্থমুনি রিয়াং পাড়া, বাহাদুর সর্দার পাড়া, দত্তমলসুম পাড়া, কলইবস্তি, নোনাছড়া, কাকড়াছড়া, এবং ত্রিপুরাবস্তির মতো এলাকা ফের ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে রূপ নিচ্ছে।
গত রবিবার বিলাইহাম রিয়াং পাড়ার ভগীরথ রিয়াং-এর ৭ বছরের শিশু সন্তান ছয়দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশুটি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েও তাকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
একইভাবে, বড়মুড়া পাহাড়ের নারায়নবস্তি এলাকার ৮ মাসের শিশু সুরজিৎ জমাতিয়া ও এক নারী, কবিতা রুপিনি, ফ্যালসিপেরিয়াম ও ভাইভেক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বদ্যোগে রাজধানীর হাপানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শিশু সুরজিৎ বর্তমানে আইসিইউ-তে ভর্তি।
অভিযোগ উঠেছে, আশাকর্মীদের বারবার জানানো সত্ত্বেও প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পরিবারগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না এবং আক্রান্তদের অবস্থা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন না।এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে, মঙ্গলবার বিলাইহাম রিয়াং পাড়ার বাইসারুং রিয়াং (১৫) নামের এক নাবালিকা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হলে, অবশেষে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জরুরি ভিত্তিতে SDMO রাজা জমাতিয়ার নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে সমস্ত MPW, MPS ও সাব-সেন্টার CHO-দের নিয়ে ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।চিন্তার বিষয় হল, গত চার বছর ধরে এই পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্য দপ্তর ডিডিটি স্প্রে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ফলে, ম্যালেরিয়ার বাহক মশার বিস্তার রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ তেলিয়ামুড়া ব্লকে ৩০ জন, মুঙ্গিয়াকামী ব্লকে ২৫ জন এবং কল্যাণপুর ব্লকে ৩০ জন ডিডিটি ওয়ার্কার নিয়োজিত থাকলেও, কাজ না থাকায় তাঁরা বছরের পর বছর ধরে বেকার হয়ে রয়েছেন।
এই মুহূর্তে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। কোথাও ভাইরাল জ্বর, কোথাও ম্যালেরিয়া—কিন্তু সঠিক রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বাস্তব চিত্র বোঝা সম্ভব নয়। অথচ সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মৌলিক অধিকার।
এখন দেখার বিষয়, স্বাস্থ্য প্রশাসন কবে এই এলাকাগুলিতে গিয়ে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে, এবং কত দ্রুত আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস গ্রহণ করে।

