লখনউ, ১১ মে : আজ উত্তর প্রদেশের লখনউতে ব্রহ্মোস ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড টেস্টিং ফ্যাসিলিটি সেন্টারের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “অপারেশন সিন্দুর শুধুমাত্র একটি সামরিক অভিযান ছিল না, এটি ছিল ভারতের দৃঢ় রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কৌশলগত সংকল্পের এক জ্বলন্ত নিদর্শন।”
তিনি জানান, এই অভিযানটি ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদী ও ভারত-বিরোধী সংগঠনগুলোর হাতে নিহত নিরীহ মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা ও প্রতিজ্ঞার পরিচয় বহন করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “যখনই ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তখন শত্রুদের জন্য সীমান্ত পার করাও নিরাপদ থাকে না।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন উরি হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, পুলওয়ামা হামলার পর এয়ার স্ট্রাইক এবং সদ্য পহেলগাম হামলার পর একাধিক প্রতিশোধমূলক অভিযান—যা গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছে নতুন ভারত সন্ত্রাসের জবাব কঠোরভাবে দিতে জানে।
তিনি আরও জানান, অপারেশন সিন্দুরের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করা, যেখানে কোনো নিরীহ নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। তবে পাকিস্তান ভারতের বেসামরিক এলাকা ও ধর্মীয় স্থাপনায় আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেছিল, যার জবাবে ভারতীয় সেনা বাহিনী রাওয়ালপিন্ডি পর্যন্ত জবাব দিয়েছে।
জাতীয় প্রযুক্তি দিবসে এই ব্রহ্মোস টেস্টিং সেন্টারের উদ্বোধনকে রাজনাথ সিং “ভারতের উদ্ভাবনী শক্তির প্রতিফলন এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেন। তিনি জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে প্রায় ৫০০টি সরাসরি এবং ১,০০০টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি শুধু বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল নয়, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তির প্রতীক, শত্রুদের কাছে সতর্কবার্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার অঙ্গীকার।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, উত্তর প্রদেশ প্রতিরক্ষা শিল্প করিডোরে ১৮০টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ৩৪,০০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই ৪,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, এলাহাবাদ, কানপুর, ঝাঁসি, চিত্রকুট, আগ্রা এবং লখনউ-এই ছয়টি কেন্দ্রে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
রাজনাথ সিং বলেন, আত্মনির্ভরতা শুধু দেশের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্ববাজারে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির বড়ো সুযোগ তৈরি করছে। তিনি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক রিপোর্ট তুলে ধরে জানান, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় ২,৭১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “লখনউ এখন প্রতিরক্ষা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে, যা আত্মনির্ভর ভারতের দিশায় একটি বড়ো পদক্ষেপ।” তিনি জানান, এই কেন্দ্রটি শুধু শিল্প নয়, প্রযুক্তি ও দক্ষতানির্ভর কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। অপারেশন সিন্দুর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি গোটা বিশ্বকে বার্তা দিয়েছে যে, ভারত এখন সন্ত্রাসবাদ সহ্য করে না। একমাত্র চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করাই এর সঠিক জবাব।”
২০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই সেন্টারে প্রোপেল্যান্ট, অ্যাভিওনিক্স, র্যামজেট ইঞ্জিন সহ একাধিক সাব-অ্যাসেম্বলি একত্রিকরণ করা হবে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে শিল্প ও প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই **ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস ৩৬ জন প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করেছে**, যাদের মধ্যে ৫ জনকে মুখ্যমন্ত্রী সংবর্ধনা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, ব্রজেশ পাঠক, প্রধান সচিব মনোজ কুমার সিং, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (DRDO) চেয়ারম্যান ডঃ সমীর ভি কামাত, ব্রহ্মোস ডিরেক্টর জয়তীর্থ আর. জোশি এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

