নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ ডিসেম্বর৷৷ কৃষি, উদ্যান, মৎস্য, বন, প্রাণীসম্পদ বিকাশের মতো প্রাথমিক সেক্টরগুলির সাথে যুক্ত মানুষের রোজগারের সুুযোগ বাড়াতে দপ্তরগুলিকে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে৷ আজ সচিবালয়ে রাজ্যের বিকাশে এই সমস্ত প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলির সাথে যুক্ত দপ্তরগুলির তিন বছরের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার কৌশল নিয়ে এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি, বনায়ন, মৎস্যচাষ, পশুপালনের সাথে যারা যুক্ত তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব নিয়ে আসতে হবে৷ সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে প্রয়াস নিয়েছে তা বাস্তবায়নে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে৷ সরকারের এই প্রয়াসকে বাস্তবায়িত করতে কৃষকদের উন্নত প্রথায় চাষাবাদে উৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সয়েল হেলথ কার্ড যে সমস্ত কৃষকরা পেয়েছেন সেই সমস্ত ক’ষকগণ তাদের জমিতে সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারছেন কিনা তাও কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে দেখতে হবে৷ উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আনারস, গোলমরিচ, আদা ও ফুল চাষের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ রাজ্যে ফুল চাষের সাথে ১,৫০০ জন চাষিকে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যাতে আগামী ২-৩ বছরে এই সেক্টরে রোজগারের সুুযোগ তৈরি হয়৷ আনারস চাষের ক্ষেত্রে স্ট্যাগারিং পদ্ধতিতে অফ সিজনেও যাতে ফলন পাওয়া যায় তারজন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাছাড়াও আনারস চাষে সঠিক সময়ে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করা, উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণের সুুবিধার উপর দপ্তরকে নজর দিতে হবে৷
সভায় মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য দপ্তরের কর্মপরিকল্পনার কৌশল হিসেবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ পাশাপাশি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে যারা মাছ চাষ করছেন তাদের মাছের চারা পোনা পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে বিষয়েও দপ্তরকে নজর রাখতে হবে৷ বায়োফ্লক পদ্ধতির সাথে যুক্ত মৎস্যচাষিগণ যাতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে পারেন সেজন্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে৷ পাশাপাশি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের শংসাপত্র দেওয়ার জন্য দপ্তরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রাণীসম্পদ দপ্তরের পর্যালোচনায় দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ পাশাপাশি রাজ্যে শূকরের মাংসের প্যাকিং ইউনিট স্থাপন করার জন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন৷
বন দপ্তরের পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী রাবারের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ তিনি বলেন, বনজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে রোজগার সৃষ্টি করার জন্য বন দপ্তরকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ রাজ্যের বনা’লে যে সমস্ত খালি জায়গা রয়েছে সেখানে কাজবাদাম, পেঁপে ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণেরও উদ্যোগ নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী সভায় আগর চাষ সম্পসারণের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন৷ তাছাড়া সভায় বন দপ্তরের আগামী তিন বছরের কর্মপরিকল্পনার কৌশল নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়৷
সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ডি পি সরকার কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য দপ্তরের তিন বছরের কর্মপরিকল্পনার কৌশল তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, চাষে বৈচিত্র্য আনা, উচ্চফলনশীলতা বৃদ্ধি, উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, মাটির গুণমান বজায় রাখা, জলসেচের সম্পসারণ, জৈব চাষের এলাকা বৃদ্ধি করা, উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণের সুুবিধা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়ে ক’ষকদের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, ২০২০-২৩ অর্থবছরের মধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ভু-া ও মাষকলাই চাষ করা হবে৷ অর্গানিক ফার্মিং-এ বর্তমানে ৬ হাজার হেক্টরে চাষ হচ্ছে৷ তা বাড়িয়ে ২০২২-২৩-এ ২১ হাজার হেক্টরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি দপ্তর৷ ক’ষি অধিকর্তা জানান, ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৫১ হেক্টর কৃষি জমির মাটির গুণমান সঠিক রাখার জন্য কৃষি দপ্তর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷
সভায় উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফণীভূষণ জমাতিয়া জানান, উদ্যানজাত ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দপ্তর জমি সম্পসারণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ তাছাড়াও হাইডেনসিটি প্ল্যান্টেশন, ইন্টার ক্রপিং পদ্ধতিতে চাষ, উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, আনারসের ফলন বাড়ানোর জন্য কেমিক্যাল স্ট্যাগারিং পদ্ধতির প্রয়োগ, জেলাভিত্তিক কোনও একটি ফলনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ চলতি অর্থবছরে রাজ্যে ১ হাজার হেক্টর জমি নতুনভাবে উদ্যানজাত ফল ও ফসল চাষের আওতায় আনা হয়েছে৷ তাছাড়া পুরোনো বাগানে রি-প্ল্যান্টিং সহ ১ হাজার হেক্টর জমি আনারস চাষের আওতায় আনা হয়েছে৷ তিনি জানান, চলতি বছরে ৭,৩৭৮ হেক্টরে মশলা চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭,৩৯২ হেক্টর এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭,৪২৯ হেক্টরে মশলা চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দপ্তর৷ চলতি অর্থবছরে ৮৫ হেক্টর জমি গোলমরিচ চাষের আওতায় আনা হয়েছে৷ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১০ হেক্টর৷ আগামী অর্থবছরে ১৫০ হেক্টর জমি গোলমরিচ চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷
সভায় মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা ডি কে চাকমা জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৩৭২ জন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সাথে যুক্ত রয়েছেন৷ আরও ৬০০ জনকে এই পদ্ধতিতে মৎস্য চাষের সাথে যুক্ত করার জন্য দপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে৷
তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত প্রজাতির মাছের চারাপোনা উৎপাদন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ, বি’ানভিত্তিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎসাহ দেওয়া ছাড়াও মাছের পোনা উৎপাদন বৃদ্ধি, মৎস্য চাষে উন্নত কৌশলের ব্যবহার, মাছ চাষিদের ৩,০০০টি এরিয়েটর দেওয়া, জলাশয়ের সঠিক ব্যবহার, ১,৫০০টি খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ, বনজ এলাকায় ৫৫৬টি জলাশয়ে মৎস্য চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
আজকের সভায় মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব জে কে সিনহা, প্রধান সচিব বি কে সাহু, প্রধান সচিব এস আর কুমার, পি সি সি এফ ড. ডি কে শর্মা, সচিব সৌম্যা গুপ্তা, সচিব সি কে জমাতিয়া, সচিব অপূর্ব রায়, বিশেষ সচিব শৈলেন্দ্র সিং সহ বিভিন্ন দপ্তরের অধিকর্তা ও অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷

