নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর৷৷ দীর্ঘ পয়তাল্লিশ দিনের অপেক্ষা আজ শেষ হয়েছে৷ ছেলে আর কখনওই বাড়ি ফিরবে না৷ সেই খবরে

দিশেহারা হয়ে পড়েন মা৷ নিখোঁজ গাড়ি চালক জীবন দেবনাথের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর শোনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মঞ্জু দেবনাথ৷ জি বি হাসপাতালে ছেলের মৃতদেহ সনাক্ত করতে গিয়ে তাঁর আর্ত চিৎকারে গোটা হাসপাতাল চত্বরের আকাশ ভারি হয়ে উঠে৷ বুক চাপড়ে তিনি শুধু একটাই বিলাপ করতে থাকেন নতুন বানানো ঘরে আর কখনওই যাওয়া হবে না জীবনের৷ এরই সাথে কেন এই ঘটনা ঘটল সেই প্রশ্ণও তুলে প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করলেন মঞ্জুদেবী৷
ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত পরিষদের সদর খুমুলুঙের কাছে সুখিছড়ায় মাটি খুঁড়ে পুলিশ নিখোঁজ গাড়ি চালক জীবন দেবনাথের পঁচাগলা পচাগলা লাশ উদ্ধার করেছে৷ গত ২০ সেপ্ঢেম্বর খুমুলুঙ থেকে নিখোঁজ হয়েছিল গাড়ি চালক জীবন দেবনাথ৷ আজ সকালে পুলিশ সুখিছড়ায় একটি পাহাড়ের ঢালে মাটি খোঁড়া শুরু করে৷ সামান্য মাটি খুঁড়েই বস্তাবন্দি মৃতদেহের কিছু অংশ দেখতে পান পুলিশ নিয়োজিত লোকজন৷ পরে বস্তাবন্দি পচাগলা মৃতদেহটি উপরে তুলে আনা হয়৷ ঘটনাস্থলে ফরেনসিক টিম এবং ময়না তদন্তের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে৷ পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষি জানিয়েছেন, গত ২০ সেপ্ঢেম্বর জীবন দেবনাথ বহিঃরাজ্যের এক সাংবাদিককে নিয়ে খুমুলুঙ গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকেই নিখোঁজ হন তিনি৷ পুলিশ সুপার জানান, এটি জীবন দেবনাথের মৃতদেহ কি না তা সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য ফরেনসিক টেস্ট হয়েছে৷ পরে নিহতের পরিবারের লোকজন মৃতদেহ শানক্ত করেছেন৷
পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষি আরও জানিয়েছেন, পূর্ব আগরতলা থানার অধীন সুভাষনগরের বাসিন্দা জীবন দেবনাথ ২০ সেপ্ঢেম্বর ডব্লিও বি ০৬-এইচ-৩৫৫ নম্বরের একটি হুন্ডাই ভার্না গাড়ি নিয়ে বহিঃরাজ্যের একজন সাংবাদিক সজ্জন কুমার এবং আগরতলার এক যুবক বিশ্বজিৎ দেববর্মাকে নিয়ে খুমুলুঙে গিয়েছিলেন৷ তখন সেখানে একটি আঞ্চলিক দলের হিংসার কবলে পড়েন তারা৷ সজ্জন কুমার এবং বিশ্বজিৎ দেবমর্বা পালিয়ে একটি সুকলে আশ্রয় নিলেও হদিশ পাওয়া যায়নি জীবন দেবনাথের৷ পরবর্তী সময়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য পেয়ে শনিবার সকালে তল্লাসী চালানো হয়৷ যদিও এর আগে বেশ কয়েকবার তল্লাসী চলানো হয়েছিল৷ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই ঘটনায় রাধাপুুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ মামলার নম্বর ১৯/১৭৷ মামলাটি হয়েছিল ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৪১/৪৩৬/৩৬৪/৩৪ ধারা মোতাবেক৷ এখন যেহেতু মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তাই খুব শীঘ্রই নতুন কিছু ধারা যোগ করা হবে এই মামলায়৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০ সেপ্ঢেম্বর খুমুলুঙে একটি উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দলের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল৷ ওই সময় এলাকায় দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এর মধ্যে জীবন দেবনাথের গাড়িও ছিল৷ গাড়ির আরোহী সাংবাদিক সজ্জন কুমার – সহ তাঁর সহায়ক পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও জীবন দেবনাথের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল৷
এদিন হাসপাতাল চত্বরে মঞ্জুদেবী তাঁর ছেলের রহস্যজনক খুনের পেছনে একাধিক প্রশ্ণ তুলেছেন৷ কেনই বা সেদিন শুধু তার ছেলেকে অপহরণ করা হল৷ কারণ, যাদের নিয়ে গিয়েছিলেন জীবন দেবনাথ তারা সকলেই অক্ষত অবস্থায় ফিরেছেন৷ সজ্জন কুমার ও বিশ্বজিৎ দেববর্মাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি৷ এরই সাথে যেই ট্রেভেল এজেন্সির অধীনে তাঁর ছেলে কর্মরত ছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে নিশানা করে বলেন, পুলিশ কেন এখনও পর্যন্ত তাদের জেরা করছে না৷ মঞ্জুদেবী এদিন বিলাপ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন যারা এলাকায় শাসক দলের কর্মী হিসেবে পরিচিত৷

