রাজ্যের কাছে রেগা প্রকল্পে একগুচ্ছ প্রশ্ণের জবাব চাইল কেন্দ্র, কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে আসছে টিম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ অক্টোবর৷৷ রেগায় টাকা পেতে ২৩ টি প্রশ্ণের উত্তর চাই৷ কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট একথা জানিয়ে দিয়েছে৷ শুধু উত্তর দিলেই যথেষ্ঠ নয়, আগামী নভেম্বরে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক বিশেষ টিম রাজ্যে এসে রেগার কাজকর্ম খতিয়ে দেখবে৷ রেগায় কাজকর্ম সন্তোষজনক হলে, তবেই কেন্দ্র প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে৷ মঙ্গলবার রাজ্যে রেগা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কাজকর্ম নিয়ে মহাকরণে পর্যালোচনা সভায় এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, রেগায় টাকা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর মতে কর্পোরেটদের স্বার্থে এবং রেগা বন্ধ করার লক্ষ্যেই টাকা কমিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহর এলাকায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্পেও বিভিন্ন রকমের প্রশ্ণের উত্তর চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ এই সমস্ত প্রশ্ণের উত্তর ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার৷
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে দেশের দরিদ্র মানুষকে বঞ্চিত করে কর্পোরেটদের মুনাফা বৃদ্ধি করতে৷ এজন্য তারা রেগায় ক্রমাগত টাকা কমিয়ে দিচ্ছে৷ এতে ত্রিপুরা সহ দেশের অগণিত অংশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ তিনি বলেন, রেগার অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে দেশের অন্য কোনও রাজ্যের মাথা ব্যথা নেই৷ একমাত্র ত্রিপুরাই কেন্দ্রের এই জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে৷ তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই৷ এই লড়াই আমাদের জারি রাখতেই হবে৷
সভায় উপস্থিত গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে রেগা কর্মসূচি তুলে দিতে৷ এজন্য একদিকে যেমন প্রতিবছর বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে, পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের প্রশ্ণ তুলে বাঁধা-বিপত্তির সৃষ্টি করে কর্মসূচি রূপায়ণে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে৷ বিভিন্ন প্রশ্ণ তুলে ও বাঁধা-বিপত্তি তৈরি করে অজুহাত তুলে বরাদ্দও স্থগিত রাখছে৷
এদিন সভার শুরুতে রেগা সম্পর্কিত আলোচনায় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব এল কে গুপ্তা জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ২৩ রকমের প্রশ্ণ তুলে ত্রিপুরায় রেগার বরাদ্দ স্থগিত রেখেছে৷ তারা জানিয়ে দিয়েছে, এই ২৩ রকম প্রশ্ণের সদুত্তর এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজ্য থেকে রিপোর্ট পাঠানোর পরই কেন্দ্র থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হবে৷ আগামী নভেম্বর মাসে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে একটি টিম রাজ্যে এসে রেগার কাজকর্ম খতিয়ে দেখবে বলে জানা গেছে৷ লক্ষণীয় বিষয় হল, রেগা চালু হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত এধরণের কোনও প্রশ্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে তোলা হয়নি৷ যে ২৩ রকমের প্রশ্ণ উত্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রতি বছর এক ধরণের কর্মসূচি নেওয়া যাবে না, কর্মসূচিতে বৈচিত্র আনতে হবে৷ ওয়েজ পেমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত ব্যাঙ্ক একাউন্ট হতে হবে এবং সমস্ত একাউন্টে আধার সংযোগ ঘটাতে হবে৷
সভায় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭-১৮ সালে রেগায় মাত্র ৪২ শ্রম দিবসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ যদিও ২০১৬-১৭ সালে ত্রিপুরায় ৮০ শ্রম দিবসের কাজ হয়েছিল৷ ২০১৭-১৮ সালে শ্রম দিবসের হার কেন কমানো হল তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়নি৷ বর্তমান অর্থ বছরে এমআইএস অনুযায়ী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ শ্রম দিবসের কাজ হয়েছে৷ কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ২৯০৭৩ কোটি টাকা৷ এর সঙ্গে রাজ্যের শেয়ার আছে আরও ২৭৬৮ কোটি টাকা৷ এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৮৩১৫ কোটি টাকা৷ ২০১৬-১৭ সালে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রেগা কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য৷ কেন্দ্রীয় সরকার কথা দিয়েও আজ পর্যন্ত সেই টাকা মিটিয়ে দেয়নি৷ দিল্লীতে ত্রিপুরা ভবনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন৷ এছাড়া যে ২৩ টি বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে জেলা শাসকদের রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন তিনি৷ পাশাপাশি রেগার কর্মসূচি রূপায়ণে রাজ্য কী কী অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে তা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বকেয়া বরাদ্দ রিলিজ করা না হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ কীভাবে শেষ হবে, তাও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে জানাতে বলেছেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ)য় ২০১৬-১৭ সালে ২৩,৭৩০ টি বাসগৃহ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল৷ এজন্য প্রথম ইনস্টলমেন্ট হিসাবে ১৬০৪১ কোটি টাকা পাওয় গেছে৷ কিন্তু ২০১৭-১৮ সালে মাত্র ১২৫৯ টি ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এখনও কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি৷ রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ঘরের সংখ্যা বাড়াতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন৷ কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি৷ সভায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) য় বাসগৃহ নির্মাণ নিয়েও আলোচনা হয়৷ নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭-১৮ সালে আগরতাল শহর রাজ্যের বিভিন্ন পুর ও নগর এলাকায় ৪০,৮৯৬ টি বাসগৃহ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে৷ এরমধ্যে ৩৩,৬২৫ টি ঘরের কাজ শুরু হয়েছে৷ এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক বিভিন্ন রকমের প্রশ্ণ তুলে কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে চাইছে৷ যদিও রাজ্য সরকার সমস্ত প্রশ্ণেরই উত্তর দিল্লীতে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
এছাড়াও সভায় সামাজিক ভাতা প্রদান নিয়ে পর্যালোচনা হয়৷ সমাজ শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭ এর সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ভাতাপ্রাপকের মোট সংখ্যা ৩,৬২,৪৮০ জন৷ এর মধ্যে জুলাই মাসে আরও ৪৬,৪৮৭ জন নতুন ভাতাপ্রাপক যুক্ত হয়েছেন৷ আরও ৪১,৮০৯ টি নতুন আবেদন দফতরে জমা হয়েছে৷ ছাত্রীদের বাই-সাইকেল প্রদান নিয়েও সভায় আলোচনা হয়৷ ২০১৭-১৮ সালে নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের ১৬,৪৩৯ টি বাই-সাইকেল প্রদানের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ২০১৩-১৪ সালে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়৷ তখন থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত ১,১৪,২৩৯ টি বাই-সাইকেল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে৷ পর্যালোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী মানিক দে, সমাজ শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী বিজিতা নাথ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া, মুখ্যসচিব সঞ্জীবরঞ্জন, প্রধান সচিব ও সচিবগণ, জেলা সভাধিপতি এবং জেলা শাসকগণ উপস্থিত ছিলেন৷