নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ১০ আগস্ট৷৷ গোটা ভারতবর্ষেই এবছর বৃষ্টির প্রবল ধারায় প্রবাহিত হয়েছে বহু রাজ্য৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলেরও এবছর প্রচুর
বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ বাদ যায়নি ত্রিপুরা রাজ্যও৷ প্রবল বর্ষনে বন্যায় ভেসেছে শহর থেকে গ্রাম৷ রাজধানী থেকে প্রতিটি জেলায় মানুষকে বন্যায় কবলে পড়তে হয়েছে৷ প্রকৃতির এই রোষাণলে পড়ে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যে৷ বিশেষ করে কৃষির ক্ষতি হয়েছে৷ পাশাপাশি নদী লাগুয়া গ্রামগুলি এবং বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ নদীর গর্ভে চলে গেছে বহু মানুষের বসতভিটা৷ কিন্তু খোয়াই জেলায় প্রশাসন ও পূর্ত দপ্তরের চরম খামখেয়ালিপনায় বহু গ্রাম উজার হয়েছে৷ বাড়ীঘর চলে গেছে নদীর গর্ভে৷ নদীর ভাঙা গড়া খেলার মধ্যে একমাত্র প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই খোয়াই কল্যানপুর সহ নদী লাগুয়া গ্রামগুলি অস্তিত্ব সংকটের মুখে৷ আগামী বর্ষার মরশুমে অনেক গ্রাম মুছেও যেতে পারে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে খোয়াই নদী লাগুয়া গ্রামের মানুষজন বছরের পর বছর ধরে আর্জি জানিয়ে আসলেও প্রশাসনের দুরদৃষ্টির অভাবে এবং পূর্তদপ্তরের খামখেয়ালিপনার স্বীকার হতে হচ্ছে তাদের৷
দীর্ঘ ২০ বছর যাবত এই খামখেয়ালিপনার শিকার খোয়াই তেলিয়ামুড়া সড়কের পাশে বাগান বাজার, গৌরাঙ্গটিলা, কল্যাণপুর এলাকার বহু বাড়ী ঘর ধীরে ধীরে নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে নিশ্চিন্ত হবার উপক্রম৷ খোয়াই তেলিয়ামুড়া মূল সড়কের পাশে বাগান বাজার এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা আজ নদীর গর্ভে চলে গেছে৷ তবে এই কাহিনী চলতে বর্ষার মরশুমের নয়৷ বিগত ২০ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে এভাবেই একটু একটু করে নদী ভেঙ্গেছে আর মূল রাস্তা নদীর গর্ভে চলে যেতে শুরু করে৷ যদিও যৎকালীন সময়ে সঠিক নজরদারীতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হতো তবে কুড়ি বছরে নদীর ভাঙন রোধ হতো এবং গ্রামের পর গ্রাম, সাধারন মানুষের বসতঘর সহ রাস্তা ঘাটগুলি রক্ষা পেত৷ বহু মানুষ আজ ঘর ছাড়া৷ বাড়ী ঘর কৃষি জমি চলে গেছে নদীর গর্ভে৷ শুধুমাত্র প্রশাসনের ও পূর্ত দপ্তরের চরম গাফিলতির ফলেই, বলছেন গ্রামের সাধারন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন৷ খোয়াই-তেলিয়ামুড়া সড়কের পাশে বাগান বাজার এলাকায় ২০০ মিটার রাস্তা খোয়াই নদীর গর্ভে চলে যাওয়ার পর নতুন করে পূর্ত দপ্তর থেকে রাস্তার পাশের বাড়ী ঘরগুলির জায়গা ক্রয় করে রাস্তা সম্প্রসারনের কাজ শুরু করে৷ কিন্তু এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষজন বেজায় ক্ষুব্ধ৷ জনগনের অভিযোগ, পূর্বের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে পূর্ত দপ্তর পুনরায় রাস্তা সম্প্রসারনের জন্য জায়গা নিয়েছে৷ বছরের পর বছর এভাবে পূর্ত দপ্তরের উদাসীনতার ফলে স্থানীয় মানুষজনকে খেশারত দিতে হচ্ছে নিজের জমি দিয়ে৷ এভাবে চলতে থাকলে একদিন এদেরকেও ভিটে মাটি ছাড়া হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন স্থানীয় জনসাধারন৷ জনগনের অভিযোগ, একমাত্র বর্ষা হলেই দপ্তর থেকে নিম্নমানের বোলডার, বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়৷ কিন্তু নিম্নমানের কাজ এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নদীর ভাঙন যেমন রোধ হয় না, তেমনি মানুষের ক্ষতির পরিমানও হ্রাস করা যায় না৷ বর্ষার সময় নদীর জলস্রোতে ঘর ভেসে যায়৷ বিগত কুড়ি বছর ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলছে আর গ্রামের পর গ্রাম উজরে হয়ে যাচ্ছে৷ বর্ষার মরশুম শেষ হতেই যেখানে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার সময় তখন প্রশাসন এবং পূর্ত দপ্তর থাকে ঘুম নিদ্রায়৷ কারোরই তখন নাকি দেখাই মিলে না বলছেন জনসাধারন৷ প্রতি বছর নিয়ম করে সরকারী অর্থ নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ জনগনের টাকা জনগনের সামনেই নদীর জলে তলিয়ে গেলেও জনগনের কোন কাজে আসছেনা৷ বাগান বাজারে খোয়াই-তেলিয়ামুড়া সড়কে ভগ্ণদশা এবং একটু একটু করে ভাঙনও রোধ করা যেত৷ নদী লাগুয়া বাড়ীঘর যেমন বেঁচে যেত তেমনি বছরের পর বছর ্যনিচ্ছাকৃতভাবে রাস্তা সম্প্রসারনের কাজ স্থানীয় মানুষ জনকেও জমি বিক্রি করতে হতো না৷ প্রায় কুড়ি বছরে কত ভিটেমাটি উজার হল তার কোন হিসেব নেই৷ খোয়াই নদীর ভাঙন রোধে কত কোটি জলে তলিয়ে গেল তারও হুদিশ নেই৷ এই অবস্থায় প্রশাসন ও পূর্ত দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষন করে ফের একবার জনসাদারন আর্জি জানিয়েছেন যেন সঠিক পরিকল্পনা মতে খোয়াই নদীর ভাঙন রোধে ব্যাবস্থা বহন কবে শতশত মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া হতে রক্ষা করা হয়৷ জনগন এখন প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে৷
2017-08-11

