দল থেকে পদত্যাগ সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সু্স্মিতার, বরাকে দলকে এআইইউডিএফের কাছে বিক্রির অভিযোগ, সিদ্দেক-কমলাক্ষও দিতে পারেন ইস্তফা

শিলচর (অসম), ৬ মার্চ (হি.স.) : দল থেকে পদত্যাগ করেছেন সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। আজ শনিবার দলীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। অসম প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে আজই তিনি দিল্লি চলে গেছেন। এদিকে দলের সর্বভারতীয় নেত্রী তথা বরাক উপত্যকার কংগ্রেসের প্রথমসারির কাণ্ডারি সুস্মিতার পদত্যাগের খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিলচরে কংগ্রেসের জেলা সদর দফতর ইন্দিরা ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করছেন তাঁর অনুগামীরা।

এই খবর লেখা পর্যন্ত কংগ্রেস এখনও তাঁদের আসন বা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। আজই সন্ধ্যার দিকে আসন সহ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথা। এরই মধ্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুস্মিতা জানতে পেরেছেন, আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বরাক উপত্যকার ১৫টি আসনের মধ্যে ছয়টি মহাজোটের প্রধান শরিক এআইইউডিএফকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দলকে এআইইউডিএফ-এর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বেজায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন সর্বভারতীয় নেত্রী। এছাড়া বিতর্কিত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক রুমি নাথকে টিকিট দেওয়ার খবর পেয়েও প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট বরাক উপত্যকা তথা একদা কংগ্রেসের প্রভাবশালী সর্বভারতীয় নেতা তথা বহুবারের প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রয়াত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেব। বরাক উপত্যকায় দলের অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের কোনও মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেনি প্রদেশ নেতৃত্ব। এ-সব নানা কারণে তিনি অপমানিত বোধ করে আজ আচমকাই তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সুস্মিতা।

এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত এবং আসন বাটোয়ারা নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বের একতরফা সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বরাকে দলীয় নেতৃবর্গের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। বরাকে কংগ্রেসের অন্যতম দুর্গ সোনাই আসন, দক্ষিণ করিমগঞ্জ, বদরপুর, হাইলাকান্দি, কাটলিছড়া এবং আলগাপুর আসন এআইইউডিএফ-কে উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ এবং উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের মতামত যাচাই করা হয়নি। অথচ বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দিতে কংগ্রসের মাটি শক্ত করতে এঁরা প্রচণ্ড ঘাম ফেলছেন। অথচ তাঁদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। এ-সব অভিযোগে নির্বাচনের আগেই ছত্রভঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে কংগ্রেসের।

এদিকে সুস্মিতা সমর্থকদের দাবি, সোনাই আসন কংগ্রেসের প্রবল মজবুত দুর্গ। সোনাই থেকে প্রাক্তন বিধায়ক এনামুল হক লস্কর কংগ্রেসের অপ্রতিরোধ্য প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু সে-কথা বিবেচনা না করেই গৌরব গগৈ, রিপুন বরারা সোনাই আসনটি এআইইউডিএফ-এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। একইভাবে দক্ষিণ করিমগঞ্জ, বদরপুর, হাইলাকান্দি, কাটলিছড়া ও আলগাপুর আসনও এআইইউডিএফ-এর কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে এআইইউডিএফ-এর কাছে বরাকের ছয়টি আসন বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া বড়খলা আসনে সুস্মিতা দেবের একমাত্র পছন্দের প্রার্থী ছিলেন পাপন দেব। কিন্তু সেখানে পাপন দেবের বদলে দলবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে বহিষ্কৃত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক ডা. রুমি নাথকে টিকিট প্রদানের খবর চাউর হওয়ায় সুস্মিতা দেব সহ স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

এদিকে দক্ষিণ করিমগঞ্জ আসন এআইইউডিএফ-এর অনুকূলে চলে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ। যার ফলস্বরূপ সিদ্দেক আহমেদও অপমান ও ক্ষোভে দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। বরাকে কংগ্রেসের ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক অবস্থা নড়েবড়ে হয়ে যাওয়ায় উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থও নিজের স্থিতি পাল্টাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। অসম প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের হিটলারি মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আজ শিলচর জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে অসংখ্য ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা কর্মীরা জমায়েত হয়ে ‘রিপুন বরা মুর্দাবাদ’, ‘গৌরব গগৈ মুর্দাবাদ’, সুস্মিতা দেব জিন্দাবাদ ধ্বনিতে সরগরম করে তুলেন গোটা এলাকা। তাঁরা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক জীতেন্দ্র সিং সহ আরও কয়েকজন নেতার ফেস্টুন ছিঁড়ে, কাটআউট তছনছ করে মাটিতে ছুঁড়ে দিয়েছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *