নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জুলাই৷৷ কোভিড কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসককে থুতু দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হতে পারেন আশংকায় ভুগছেন সহকারী সরকারি আইনজীবী কর্নজিত দে৷ করোনা মুক্ত হয়ে কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে ছুটি পাওয়ার পর বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি তিনি৷ ফলে, চিকিৎসককে থুতু দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারি এড়াতে আজ তিনি ত্রিপুরা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন৷ কিন্ত তার আইনজীবী আদালতে কোন রকম প্রামান্য দলিল দেখাতে পারেননি৷ তাই, আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেনি ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ তার বদলে আগামী ৫ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে কেইস ডায়েরি আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অরিন্দম লোধ৷ শুধু তাই নয়, ২৪ ঘন্টার মধ্যে টি আই প্যারেডে অভিযুক্তকে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ সাথে সিআরপিসি ১৬৪ ধারায় অভিযোগকারী চিকিতকের জবানবন্দী রেকর্ড করতে বলা হয়েছে৷ কর্নজিত দে বর্তমানে সিপার্দে প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে রয়েছেন৷
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার শিশু সহ করোনা আক্রান্ত পাঁচ জন্মদাত্রী এবং এক গর্ভবতী মহিলাকে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভগৎ সিং কোভিড কেয়ার সেন্টারে ভরতির জন্য নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে ভরতি অন্য করোনা আক্রান্তরা তাতে আপত্তি জানান৷ খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন পশ্চিম জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সংগীত চক্রবর্তী৷ কিন্তু, রোগীরা তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেন৷ এ-বিষয়ে ডা. সংগীতা জানিয়েছিলেন, সদ্যজাত সন্তান নিয়ে জন্মদাত্রীরা এবং পিপিই কিট পরে স্বাস্থ্য কর্মীরা ৫ ঘণ্টা ধরে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন৷ কিন্তু তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না৷ এমন কি, তাঁকে লক্ষ্য করে থুতু ফেলা হয়েছে এবং এক যুবক উপর থেকে জল ফেলেছে৷ তিনি বলেন, অবশেষে কোনও উপায় না পেয়ে ওই করোনা আক্রান্তদের জিবির কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷
তিনি জানান, সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম৷ কর্তব্যরত অবস্থায় লাঞ্চনার শিকার হয়েছি, সে-বিষয়ে রিপোর্টে জানিয়েছি৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনাও করেছেন৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা বলেন, গতকাল নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় ওই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে৷ পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার মানিক দাস জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির আইন সকলকে মেনে চলতে হবে৷ এক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর হামলাহুজ্জুতি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷
চিকিৎসককে লক্ষ্য করে থুতু দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের তরফে করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন৷ এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছেন থানা কর্তৃপক্ষ৷ ওই ঘটনায় সহকারী সরকারি আইনজীবী কর্নজিত দে ত্রিপুরা হাইকোর্ট-এ আগাম জামিনের আবেদন জানান৷ আজ বিচারপতি অরিন্দম লোধের সিঙ্গল বেঞ্চে ওই মামলায় শুনানি হয়েছে৷
এ-বিষয়ে কর্নজিত দের আইনজীবী রাজু দত্ত বলেন, আজ আদালতে আগাম জামিনের উপর শুনানি হয়েছে৷ সময় মত কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে তার মক্কেলের ছুটির কাগজ হাতে আসেনি, তাই আদালতে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ পরবর্তী শুনানিতে ওই নথি জমা দেওয়া হবে৷ তার কথায়, চিকিতকের সাথে অবাঞ্চিত ঘটনায় তার মক্কেলকে ফাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে আশংকায় আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে৷ কারণ, তাকে ছুটি দেওয়ার পর বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি৷ তাকে এখন সিপার্দে রাখা হয়েছে৷ অথচ, ছুটির কাগজে গৃহে একান্তবাসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
ওই মামলা সম্পর্কে এপিপি সম্রাট ঘোষ বলেন, আদালতে জামিনের স্বপক্ষে কোন প্রামান্য দলিল জমা দিতে পারেনি আবেদনকারীর আইনজীবী৷ কারণ, এজাহারে তার নাম নেই, কেনই বা তিনি গ্রেফতার হবেন ভাবছেন তার কোন প্রমান ছাড়াই আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন৷ তাই, ত্রিপুরা হাই কোর্ট ওই আবেদন মঞ্জুর করেনি৷ সম্রাটবাবু বলেন, বিচারপতি অরিন্দম লোধ আগামী ৫ আগস্ট ওই মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন৷ ওইদিন আদালতে কেইস ডায়েরি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ সাথে ২৪ ঘন্টার মধ্যে টি আই প্যারেডে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য পুলিশ-কে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি, সিআরপিসি ১৬৪ ধারায় অভিযোগকারিনি চিকিতকের জবানবন্দী রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন৷