নাবালিকা রাজস্থানে বিক্রি : সামগ্রিক বিষয়ে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে নজর রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ জুন৷৷ ত্রিপুরার নাবালিকা রাজস্থানে বিক্রির ঘটনায় উচ্চ আদালতে সুয়োমোটো মামলার আজ শুনানি হয়েছে৷ শুনানি শেষে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে সামগ্রিক বিষয়ের উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ ওই নাবালিকা করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজস্থানে আইসোলেশনে রয়েছে৷ তাই তাকে সুস্থ করে তোলার বিষয়টি নজর দেওয়ার জন্য কমিশনকে বলেছে আদালত৷ ১৪ দিন পর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে হাইকোর্ট৷


প্রসঙ্গত, ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে গত ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা থেকে রাজস্থান নেওয়া হয়েছিল৷ তাকে সেখানে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল৷ মে মাসে ওই নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে৷ বিষয়টি কেবল মহিলা কমিশনই নয়, শিশু সুরক্ষা কমিশনেও পৌঁছেছিল৷ তদন্ত চলাকালীন ওই নাবালিকা ত্রিপুরার বাসিন্দা বলে দাবি করে৷ তাঁর বাড়ি ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার ফটিকরায় থানা এলাকায় অবস্থিত বলে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন৷


এই ঘটনায় ঊনকোটি জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে নাবালিকার ঠিকানা নিশ্চিত করেছে রাজস্থানের মান্দাওয়া পুলিশ৷ নাবালিকাটি পুলিশকে জানিয়েছে, তাকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল৷ তাই, সে পালিয়ে গিয়েছিল৷ সম্প্রতি পুলিশ তার শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ তখন তার কোভিড নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ গত ১৬ জুন তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ রাজস্থানের ঝুনঝুনু থেকে হিন্দুস্থান সমাচার-এর সংবাদদাতা বিডিকে হাসপাতালের পিএমও ডা. শুভকরণ কালের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, মান্দাওয়া থানা থেকে ১৪ বছরের নাবালিকার নমুনা পাঠানো হয়েছিল৷ তার কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷
গতকাল এ-বিষয়ে ত্রিপুরা শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপারসন বলেন, ওই নাবালিকা করোনা আক্রান্ত এবং আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা৷ ফলে, এখন তাকে ত্রিপুরায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে৷ তাঁর দাবি, কমিশনের একটি টিম গতকাল ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ওই নাবালিকাকে রাজু দেবনাথ নামের এক যুবক রাজস্থান নিয়ে গিয়েছিল৷ সেখানে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল সে৷ পড়াশুনার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে রাজস্থান নিয়ে গিয়েছিল রাজু নামের যুবক৷ কিন্তু তার বদ উদ্দেশ্য কী ছিল তা নাবালিকা এবং তার পরিবার বুঝতে পারেনি, বলেন নীলিমা ঘোষ৷


আজ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশি এবং বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলায় শুনানি হয়েছে৷ এ-বিষয়ে সরকারি আইনজীবী দেবালয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই নাবালিকার বর্তমান শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া আদালতের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল৷ পাশাপাশি, নাবালিকার নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে আদালত জানতে চেয়েছিল৷ তাই ত্রিপুরা হাইকোর্ট সুয়োমোটো মামলায় ত্রিপুরা সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর, ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশন, ঊনকোটির জেলাশাসক, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং ত্রিপুরা শিশু সুরক্ষা কমিশনকে পক্ষভুক্ত করেছিল৷ আজ ওই মামলায় শুনানি হয়েছে, বলেন তিনি৷


দেবালয় বাবুর কথায়, আদালতে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন বলেছে, রাজস্থানে পুলিশ, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সাথে এ-বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ হয়েছে৷ কমিশন জানিয়েছে, ওই নাবালিকা করোনা সংক্রমিত এবং তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে৷ ফলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রাজস্থান থেকে ত্রিপুরায় ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, আদালত ১৪ দিন সামগ্রিক বিষয়ের উপর নজর রাখার জন্য জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি, বাকি পক্ষভুক্তদের লিখিত বক্তব্য জানাতে বলেছে৷ সরকারি আইনজীবীর কথায়, ওই নাবালিকার পরিবার তাকে এখন গ্রহণ করতে চাইছে না৷ তাই, তাদের কাউন্সেলিং করার জন্যও আদালত নির্দেশ দিয়েছে৷