রাম মন্দির এবং ৩৭০ ধারা জট ঝুলিয়ে রেখছিল কংগ্রেস, সমাধান করেছে বিজেপি : প্রধানমন্ত্রী

রাঁচি, ২৫ নভেম্বর (হি.স.) ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোমবার পালামৌ জেলার সদর শহর মেদিনীনগরের আয়োজিত বিশাল জনসভা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বিপুল জনধ্বনি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান জনসভায় আসা প্রচুর সংখ্যক মানুষজন। সোমবার নিজের বক্তব্যে অযোধ্যার রাম মন্দির এবং ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি স্থানীয় বিষয়গুলিও তুলে ধরেন তিনি।

ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জাতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে নিজের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি অযোধ্যা নিয়ে যে বিবাদ চলছিল তা কংগ্রেস বহু দশক ধরে ঝুলিয়ে রেখে ছিল। চাইলে এর সমাধান করতেই পারত কংগ্রেস। কিন্তু তা তারা করেনি। ভোটব্যাঙ্কের জন্য বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিল তারা। কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্ককেই বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের এই ভাবনা থেকে দেশ এবং সমাজের ক্ষতি হয়েছে। স্রেফ বিভাজন নয়, এর জেরে সমাজে বিভাজনের দেওয়াল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের জন্য সমর্পিত। একতা মন্ত্র নিয়ে বিজেপি এগিয়ে চলেছে। বিজেপি কথা দিয়েছিল অযোধ্যা বিবাদের দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। তাই এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের জন্য তেমনই হয়েছে। এখন শ্রীরামজন্মভূমির বিবাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। সমস্যার সমাধান হলে আনন্দ হয়। বিজেপি নিজের সঙ্কল্পগুলি পূরণ করেছে। প্রতিটি নাগরিকদের মর্যাদাকে বিজেপি গুরুত্ব দিয়েছে।  

এদিনের জনসভায় রাম মন্দিরের পাশাপাশি ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমস্যার তৈরির জননী হচ্ছে কংগ্রেস। বিজেপি হচ্ছে সমাধানের জনক। সেবা করার মনোভাব নিয়ে বিজেপি সরকার কাজ করে। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির বিষয়টি কংগ্রেস ৭০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঝাড়খণ্ড সহ গোটা দেশের সেনা জওয়ান জম্মু ও কাশ্মীরে মোতায়েন ছিল। সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বহু সেনা জওয়ান শহিদ হয়েছে। বিজেপি এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা করিয়ে দেখিয়েছে।

এদিনের জনসভায় নিজের বক্তব্য শুরু করার আগে রাম-রাম বলে সম্বোধন করেন তিনি। তারপর লাতেহারে মাওবাদী হামলায় শহিদ পুলিশকর্মীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এই বিপুল জনসমগম যে তাঁর অনুপ্রেরণা স্রোত তা মনে করিয়ে দেন তিনি। জনগণের টানেই বারেবারে ঝড়খণ্ডে ফিরে আসেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, পালামৌ বিজেপির শক্তিশালী গড়ে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশে বিজেপির ফুল ফুটেছে। জনগণের ভালবাসা এবং আশীর্বাদের জন্যই যে তা সম্ভব হয়েছে তা মেনে নেন তিনি। রাজনৈতিক স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিজেপি যখন রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিল তখন কংগ্রেস মজা ওড়াতো। ২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালেও বিজেপি বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ঝাড়খণ্ড ক্ষমতায় আসবে বলে দাবি করেছেন তিনি। জনসভায় আসা বিপুল জনসমুদ্র ভোটের ফলাফলে প্রতিফলিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন বিজেপি সরকার সকলের জন্য চিন্তা করেন। বিজেপি সরকার সাধারণ শ্রেণীর জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে বহু গরিব মানুষ। ঝাড়খণ্ড থেকে আয়ুষ্মান ভারতের পথ চলা শুরু হয়েছিল। সবকা সাথ সবকা বিকাশের প্রতি বিজেপি সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। রঘুবর দাসের সরকার সবার জন্য কাজ করেছে। রাজ্যে ফের পদ্মফুল ফোটানোর দায়িত্ব এবার জনগণের।

অটলজি ব্যথা অনুভব করেছিলেন এবং আলাদা ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে জনজাতি মন্ত্রক গঠন করেছিলেন

ভিড়ে ঠাসা জনসমাবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, অটলজি উপজাতি, পশ্চাৎপদ, বঞ্চিত সমাজের বেদনা অনুভব করতে পেরে আলাদা ঝাড়খণ্ড তৈরি করেছিলেন। প্রথমবার আলাদা জনজাতি মন্ত্রক গঠন করেছেন যাতে আমাদের বনবাসী ভাইদের     সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় | তিনি বলেন, ভাবুন স্বাধীনতার এত বছর ধরে তাঁদের নিয়ে চিন্তার কেউ ছিল না । এপর্যন্ত তাঁদের জন্য মন্ত্রক ছিল না। ওবিসির জন্য কমিশন গঠিত  হয়েছিল কিন্তু সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়নি । বিজেপি সরকারই কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছে।

ঝাড়খণ্ডবাসীদের সামাজিক ন্যায়ের পাঁচটি সূত্র দিলেন প্রধানমন্ত্রী

মোদী বলেন, নতুন ঝাড়খণ্ডের জন্য বিজেপি সরকার সামাজিক ন্যায়বিচারের পাঁচটি ক্ষেত্রে কাজ করেছে। প্রথম সূত্রটি স্থিতিশীলতা, দ্বিতীয় সূত্র হ’ল সুশাসন, তৃতীয় সূত্র সমৃদ্ধি, চতুর্থ সূত্র শ্রদ্ধা এবং পঞ্চম সূত্রটি হ’ল সুরক্ষা। বিজেপি ঝাড়খণ্ডকে একটি স্থিতিশীল সরকার দিয়েছে। বিজেপি ঝাড়খণ্ড থেকে দুর্নীতির অবসান ঘটাতে দিন-রাত কাজ করেছে এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থা করেছে। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সমৃদ্ধির পথ খুলেছে।

জল, জমি ও জঙ্গলের সুরক্ষা নিয়ে কোনও আপোস নয়
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,  বিজেপি সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে রাস্তাঘাট এবং বিদ্যুৎ আজ ঝাড়খণ্ডের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, এখানে কর্মসংস্থানের নতুন উপায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখান থেকে পাওয়া বাক্সাইটের একটি বড় অংশ এখানকার উন্নয়নেই যাতে ব্যয় করা হয় বিজেপি সরকারই প্রথম তার ব্যবস্থা করেছে। বিরোধীরা হতাশায় কিছু বলতেই পারে,  তবে আপনার জল, জমি ও জঙ্গলের সুরক্ষা এবং আপনার স্বার্থের কোনও ক্ষতি করতে দেব না ।

কংগ্রেসের কাছে কেবল সমস্যা রয়েছে, আমাদের আছে সমাধান  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের কাছে সমস্যা আছে। আমাদের কাছে সমাধান আছে। তাদের অভিযোগ রয়েছে, আমাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে। উত্তরের কয়লা প্রকল্প নিয়ে কংগ্রেস কখনও প্রচেষ্টা করেননি। কংগ্রেস এবং তাদের বন্ধু দলগুলি কখনই কৃষকদের নিয়ে চিন্তা করেনি । তারা সমস্যা এড়িয়ে ভোট সংগ্রহ করে গেছে ।

হিংসার মাধ্যমে চলেছে বিরোধীদের পসার  

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, এই স্বার্থপর লোকদের (বিরোধী) ঝাড়খণ্ডের সেবা করার কোনও অনুভব নেই। এই স্বার্থপর লোকদের জোটের একমাত্র লক্ষ্য হ’ল ঝাড়খণ্ডের সম্পদের অপব্যবহার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এজন্য তারা আবার আপনাদের বিভ্রান্ত করে আপনার ভোট চাইছে। তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ডে অস্থিতিশীলতার সুবিধা এমন লোকেরা নিয়েছিল যাদের পসার চলে হিংসতায় । কেন্দ্র এবং ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার এই পরিস্থিতিকে অনেকাংশে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিজেপি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, পূরণ করেছে

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানের কৃষকরা পিএম কিষাণ যোজনার সুবিধা পাচ্ছেন না| তাঁরা মনে করেন, কৃষকরা যদি সমৃদ্ধ হন তাহলে মোদীর জয়-জয়কার করবে| প্রধানমন্ত্রীর কথায়, লুটতরাজ বনাম সেবা মনোভাবাপন্নদের মধ্যে নির্বাচন হতে চলেছে ঝাড়খণ্ডে| ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আগে বোঝা উচিত কে কাজ করেছে, কোন উদ্দেশ্যে কাজ করেছে| বিজেপি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করেছে|

ডাবল ইঞ্জিন সরকারের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্য কোনও সরকার ক্ষমতায় আসলে কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে| ঝাড়খণ্ডের জন্য গৌরবের বিষয় হল এই যে, আয়ুষ্মাকন ভারত চালু করে গোটা দেশকে দিশা দেখিয়েছে| ডাবল ইঞ্জিন সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রকল্পগুলির আরও বেশি সুবিধা পাবেন মানুষজন| উজ্জ্বলা প্রকল্পের সৌজন্যে দেশের ৮ কোটি মানুষ লাভবান হয়েছেন| ঝাড়খণ্ডের ৩৭ লক্ষ মানুষ দ্বিতীয় সিলিন্ডার বিনামূল্যেই পেয়েছেন| এটাই দ্বিগুণ সুবিধা| প্রধানমন্ত্রী কিষাণের সঙ্গেই সিএম কিষাণ আশীর্বাদ যোজনার মাধ্যমে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার আপনাদের বাড়ি পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে|

প্রতিটি গরিবের নিজস্ব বাড়ি হবে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, প্রতিটি দরিদ্র মানুষেরই নিজস্ব বাড়ি হবে, আমরা তা নিশ্চিত করব| সরকার বদলালে কি হয়, তা আমি আপনাদের বলব| উত্তর প্রদেশের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরনো সরকার ছিল ততক্ষণ কাগজের উপর ঘর তৈরি হত| যোগীজির সরকার গঠন হওয়ার পরই সবচেয়ে বেশি বাড়ি উত্তর প্রদেশেই তৈরি হচ্ছে|

ঝাড়খণ্ড যুবা অবস্থায়, যে দিশা পাওয়া যাবে তা ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী সরকার পুনরায় গঠন করা অত্যন্ত জরুরি| ১৯-২০ বছরের মধ্যেই বাচ্চাদের ভবিষ্যত ঠিক করা হয়| ঝাড়খণ্ড যুবা অবস্থায় রয়েছে| এই অবস্থায় যে দিশা পাওয়া যাবে তা ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে| বিগত পাঁচ বছরে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য পাঁচটি বড় কাজ করেছে| সম্মাপন ও সুরক্ষা নিয়ে দুর্দান্ত কাজ হয়েছে| ঝাড়খণ্ডে দুর্নীতির অবসান ঘটাতে দিন-রাত কাজ করছে বিজেপি| বিজেপি সমাজের প্রতিটি মানুষকে গর্বিত করেছে|

নকশালবাদ ও অপরাধ থেকে মুক্তির জন্য দুর্দান্ত প্রচেষ্টা করা হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, নকশালবাদ ও অপরাধ থেকে মুক্তির দুর্দান্ত প্রচেষ্টা করা হয়েছে| পাঁচ বছর আগে কেমন পরিস্থিতি ছিল আপনারা মনে করে দেখুন| আগে সন্ধ্যা ছ’টাতেই জনজীবন থেমে যেত| এখন রাতেও জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে| এটা বড় পরিবর্তন| সরকার প্রত্যেকের জন্য সমৃদ্ধির পথ খুলেছে| ঝাড়খণ্ডে আগে পিছনের দরজা থেকে সরকার গঠিত হত| এখানকার বিরোধী দলগুলির একমাত্র উদ্দেশ্যে ক্ষমতা ভোগ করা| এজন্যই তাঁরা আপনাদের কাছে ফের ভোট চাইছে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *