নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ অক্টোবর৷৷ প্রাণীসম্পদকে ভিত্তি করে রাজ্যে রোজগার সৃষ্টি সম্ভব বলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ শনিবার সচিবালয়ের ১ নং কনফারেন্স হল-এ প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়ে এক পর্যালোচনা সভায় তিনি এ-ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে সমস্ত সুবিধা রয়েছে তা কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরলু, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার অলক, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের বিশেষ সচিব শৈলেন্দ্র সিং আলোচনায় অংশ নিয়েছেন৷
এদিন পর্যালোচনা সভায় দুগ্ধ এবং ডিম উৎপাদন বাড়িয়ে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র ডিম আমদানি করতে গিয়েই রাজ্যের বড় পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর বহিঃরাজ্যে চলে যাচ্ছে৷ ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে রাজ্যের মানুষের কাছে এই অর্থ রাখা যাবে৷ তাতে ডিমের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি রোজগারের সুযোগও সৃষ্টি হবে৷ প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরকে সে অনুযায়ী কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি পরামর্শ দেন৷
তাঁর কথায়, এজন্য দফতরের আধিকারিকদের দায়িত্ব স্থির করে অগ্রসর হতে হবে৷ বাড়াতে হবে কাজের গতি৷ প্রয়োজনে নিতে হবে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা৷ মুখ্যমন্ত্রী শূকরের মাংস প্রক্রিয়াকরণের উপরও গুরুত্বারোপ করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছেন৷ বৈঠকে তিনি গোমতি কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের উৎপাদিত আইসক্রিমের স্বাদে রাজ্যের ক্যুইন আনারস ব্যবহার করার জন্য উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি গুণগতমান যাতে বজায় থাকে সেই বিষয়েও নজর রাখা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
তিনি মনে করেন, আইসক্রিমের ব্র্যান্ডিং এবং উপস্থাপনা উন্নতীকরণের পাশাপাশি প্রচারের দিকটিও দেখা আবশ্যক৷ তাতে মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হবেন৷ সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গোমতি ডেয়ারির তৈরি দুগ্ধজাত সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তিনি প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরকে বিভিন্ন গবাদি পশু ও উৎপাদিত সামগ্রী নিয়ে একটি বড় ধরনের মেলার আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন৷
এদিনের পর্যালোচনা সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের অধিকর্তা দিলীপ কুমার চাকমা সর্বশেষ সভায় গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা উপস্থাপন করেন৷ তিনি বলেন, ডেয়ারি এন্ট্রারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২৭৪ জন সুবিধাভোগীকে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং আরও ৬৫০ জন সুবিধাভোগীর ঋণের আবেদন মঞ্জুর করার প্রক্রিয়া চলছে৷ নার্বাড-এর মাধ্যমে ভরতুকিতে এই ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তিনি জানান, বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়কালে গোলাঘাটি এবং বামুটিয়া ব্লকের দুর্গাবাড়িতে দুটি কমার্শিয়াল লেয়ার ফার্ম শুরু হয়েছে৷ যেখানে ১০ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে এবং প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে৷ এছাড়াও ডুকল ব্লকে নেস্ট প্রোটিন প্রাইভেট লিমিটেড নতুন একটি ফিড মিক্সিং প্ল্যান্ট চালু করেছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের এ ধরনের বেসরকারি উদ্যোগীদের চিহ্ণিত করে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করার জন্য দফতরকে এক বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেন৷
বৈঠকে মেলাঘরের রুদ্রসাগরের পাশাপাশি ডুম্বুর জলাশয়ে হাঁস বিতরণের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়৷ বৈঠকে দফতরের অধিকর্তা চাকমা জানান, এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন গো-প্রজনন কর্মী কৃত্রিম প্রজননের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন৷ আরও ৩৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গো-প্রজনন কর্মীদের কৃত্রিম প্রজননের উপর প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে৷ আরও ৫০ জনের প্রশিক্ষণ চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে৷ অধিকর্তা চাকমা জানান, গান্ধীগ্রামের আরকে নগরে ছয় হেক্টর এলাকায় মরিঙ্গা গাছের চাষ শুরু হয়েছে৷ এই মরিঙ্গা গাছের বিষয়বস্তুর ওপর একটি নোট তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷
এদিনের বৈঠকে ছাগল প্রজনন প্রকল্পে ৪১৪টি সিরোহী প্রজাতির ছাগল বিলির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্ণিত করে ক্লাস্টার পদ্ধতির মাধ্যমে এই প্রজাতির ছাগল বিলি করা প্রয়োজন৷ এতে করে পর্যবেক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাও সুবিধা হবে৷ আলোচনাচক্রমে রাজ্যে মহিষের সংখ্যা বৃদ্ধি করার বিষয়টিও প্রাধান্য পায়৷