ঢাকা, ৩০ জুন (হি.স.): শীঘ্রই বেনাপোল-ঢাকা রুটে সরাসরি ট্রেন চালু হতে চলেছে । কোরবানির ঈদের আগে যে কোনও দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ট্রেন চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে । এদিকে ট্রেন চালুর সংবাদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলসহ বেনাপোলের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের মানুষের সিংহভাগই ভারতে যাতায়াত করেন বেনাপোল-হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে। এই পথে যাতায়াতের মাধ্যম বাস। খুলনা থেকে যশোর হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বন্ধন নামে একটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু কলকাতাগামী সারাদেশের যাত্রীর চাপ সামলায় বাস। এর মধ্যে বেনাপোল-ঢাকা রুটে সরাসরি ট্রেন চালুর ঘোষণা এসেছে। কোরবানির ঈদের আগে যে কোনও দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ট্রেন চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে ট্রেন চালুর সংবাদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলসহ বেনাপোলের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ভারতের সঙ্গে রেল ও স্থলপথে বাণিজ্য ছাড়াও পাসপোর্টধারী যাত্রীর অন্তত ৭০ শতাংশের যাতায়াত রয়েছে এই পথে। এই পথে প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভারতে ৬ থেকে ৭ হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। এই যাত্রীদের সিংহভাগ আসে ঢাকা থেকে। বেনাপোল থেকে পরিবহন সংকট এবং আরিচা ঘাটে যানজটের কারণে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হন।
ঢাকা-বেনাপোল সরাসরি ট্রেন চালু হলে এই রুটে যাত্রীসেবায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিতে যেমন দুর্ভোগ লাঘব হবে, তেমনি আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। সূত্র জানায়, প্রথম পর্বে আসছে ঢাকা- বেনাপোল রুটে আন্তঃনগর ট্রেন। এরপর বুলেট ট্রেন। এছাড়া ভারতের সঙ্গে রেল কার্গো সার্ভিস চালু হবে। এ সেবা চালু করতে এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপ- আঞ্চলিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার কমার্সের আমদানি-রফতানির সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, বেনাপোল-ঢাকা রুটে ট্রেন চালু হলে আমাদের স্বপ্ন স্বার্থক হবে। শীঘ্রই ট্রেন চালু হবে বলে আমি আশা করছি। স্থানীয়রা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার জন্য বেনাপোল রুটে কোলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে দেশের সিংহভাগ মানুষ যাতায়াত করে থাকে। সেক্ষেত্রে ট্রেন চালু হলে এ পথে যাত্রীর সংখ্যা ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
বেনাপোল থেকে সাংবাদিকরা হিন্দুস্থান সমাচারকে এই রুটের বিবরণ দিতে গিয়ে আজ দুপুরে জানান, ঢাকার পাসপোর্টযাত্রী আবুল কালাম জানিয়েছেন, আরিচা ঘাটে যানজটের কারণে তাদের নাজেহাল হতে হয়। শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠে আজ রবিবার দুপুর ১২টায় বেনাপোল এসে নেমেছেন তিনি। আরেক যাত্রী বাবলুর রহমান জানান, অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাবেন তিনি। ঢাকা থেকে আসতে তাদের ভিশন কষ্ট পেতে হয়েছে। সারারাত বাসের ভেতর বসে তার বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ পথে ট্রেন চালু হলে পথ বেশি হলেও অন্তত যানজটের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার জন্য বেশি নির্ভর করতে হয় ভারতের ওপর। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভারতের সঙ্গে যাতায়াতের জন্য নির্ভর করতে হয় বাসের ওপর। ঢাকা থেকে এ পথে ট্রেন চালু হলে সবদিক দিয়ে শুধু বেনাপোল নয় দেশও এগিয়ে যাবে।
বেনাপোল স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, কোরবানি ঈদের আগে বেনাপোল-ঢাকা ট্রেন চালু হবে। এই রেলটিতে ১০টি বগি থাকবে। তবে রেলের কোনও নাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রাথমিকভাবে তিনটি নাম পছন্দ করা হয়েছে। যেমন- বেনাপোল এক্সপ্রেস, বন্দর এক্সপ্রেস ও ইছামতি এক্সপ্রেস। তিনি আরও বলেন, ১০টি বগির ভেতর দুটি কেবিন, দুটি এসি চেয়ার ও বাকিগুলো চেয়ার থাকবে। কেবিনের ভাড়া প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২০০ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার টাকা ও নন এসি চেয়ারের ভাড়া হবে ৫০০ টাকা । তবে এটি সামান্য কয়েকটি স্টেশনে থামানো হবে। মোটামুটি নন-স্টপ হিসাবে এ ট্রেনটি চলবে ঢাকা-বেনাপোল রুটে।