বাংলাদেশের পর নেপালও বিদ্যুৎ কিনছে রাজ্য থেকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুন৷৷ বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপালও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করছে৷ গড়ে প্রতিদিন ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে নেপাল৷ এ-বিষয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা থেকে এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপালেও বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে৷ নেপাল গড়ে প্রতিদিন ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে৷
তিনি জানান, ত্রিপুরায় এখন বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত৷ ফলে, বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই৷ তাঁর দাবি, উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রচুর লাভ হচ্ছে৷ তাই আগামী দিনে আরো বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে৷


বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথায়, ত্রিপুরায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১১৫ মেগাওয়াট৷ তাছাড়া, ওটিপিস ৭২৬ মেগাওয়াট এবং রামচন্দ্রনগর ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ ফলে, সেখান থেকে প্রাপ্ত অংশ রাজ্যের প্রয়োজন মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করা হচ্ছে৷ কারণ, ত্রিপুরায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে৷
তিনি জানান, বাংলাদেশ ত্রিপুরা থেকে সবর্োচ্চ ১৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছে৷ তবে, গড়ে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রতিদিন কিনছে বাংলাদেশ৷ এখন বাংলাদেশও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে শুরু করেছে৷ তিনি জানান, সেন্ট্রাল গ্রিড থেকে নেপাল বিদ্যুৎ সংগ্রহ করছে৷ ফলে, বিদ্যুৎ পরিবাহীতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না৷


ত্রিপুরা বর্ষা প্রধান রাজ্য৷ এ রাজ্যে ঝড়, তুফান, বন্যা, ভূমিকম্প হতেই পারে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে বা লাইন বিচ্ছিন্ন হলে তা দ্রত সারাইয়ের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের দায়িত্ব রয়েছে৷ এ লক্ষ্যে ’বিদ্যুৎ নিগম আপনার দোরগোড়ায়’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ এছাড়া বিদ্যুৎ ভোক্তাগণকে বিদ্যুৎ সম্পর্কিত যে কোন প্রকার অভিযোগ নিগমের কল সেন্টার-এর টোল ফ্রি নম্বর ১৯১২-অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে৷ এছাড়াও ভোক্তাগণ রাজ্যের যে কোন স্থান থেকে বৈদ্যুতিক ক্রটি সংক্রান্ত অভিযোগ/তথ্য দূরভাষ নম্বর ০৩৮১-২৩৫-৩৫০২ এবং ০৩৮১-২৩৫-৬৪৭০ এ জানাতে পারেন৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা আজ বিকেলে তাঁর অফিস কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানান৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেববর্মা জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে তা সারাইয়ের জন্য ৪টি এলাকা ভিত্তিক সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ এগুলি হল আরবান, সেমি-আরবান, রুর্যাল ও রিমোর্ট৷

এছাড়া নিগমের সার্কেল/ডিভিশন/সাব-ডিভিশন অফিসগুলির আধিকারিকদের সাথে সহজে যোগাযোগ করার জন্য সম্পতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের মোবাইল নম্বর সহ বি’াপন দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, এই সরকারের নীতি হল মানুষ সরকারের কাছে আসবে না৷ সরকার মানুষের কাছে যাবে৷ লাইনম্যানদের প্রশিক্ষণের জন্য সূর্যমনিনগরে একটি ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হয়েছে৷ আগে তাদের বিমা ছিল ২ লক্ষ টাকা৷ এখন ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷


সাংবাদিক সম্মেলনে উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যকে হুক লাইন মুক্ত করার কাজ চলছে৷ আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে উত্তর জেলাকে ’হুকলাইন মুক্ত জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে৷ সৌভাগ্য যোজনায় এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৬ হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ গ্রামে গ্রামে প্রি-পেইড মিটার বসানো হচ্ছে৷ শহরে বসানো হচ্ছে মার্ট মিটার৷ সচিবালয়, বিধানসভা ও হাইকোর্টে সোলার পাওয়ার ব্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে গোবর গ্যাস প্ল্যান্টের উপর৷ এ স্কীমটি ৩৩ হাজার টাকার৷ যাদের ৩টি বা বেশি গাভী রয়েছে তারা এ প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেন৷

এক্ষেত্রে সুুবিধাভোগীকে ১৫০০ টাকা বহন করতে হয়৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমরা রুখিয়া থেকে ৬৩ মেগাওয়াট, বড়মুড়া থেকে ৪২ মেগাওয়াট, ডম্বর থেকে ১০ মেগাওয়াট, মনারচক থেকে ১০০ মেগাওয়াট, সেন্ট্রাল শেয়ার থেকে ১৩০ মেগাওয়াট এবং ও টি পি সি থেকে ৭২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাই৷
রাজ্যের বর্তমানে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট৷ বাংলাদেশে ১৯০ মেগাওয়াট এবং নেপালে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়৷ বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এজন্য প্রয়োজনে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হবে৷ ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় ১৩২ কে ভি, ৯টি এবং ৩৩ কে ভি/১১ কে ভি, ৪৪টি সাব-স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এই সাব-স্টেশনগুলি চালু হলে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান আরও উন্নত হবে৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমরা প্রতিশ্রতি দিয়েছি এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার৷ আমরা রাজ্যবাসীর সহযোগিতা নিয়ে ত্রিপুরাকে এক মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *