নয়াদিল্লি, ২৪ জুলাই (হি.স.): দেশজুড়ে গণপিটুনির মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে| যা নিয়ে আবারও মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং | মঙ্গলবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, “গণপিটুনির ঘটনায় চিন্তিত কেন্দ্র| আমরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করছি| সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে| এই সমস্ত ঘটনা কমাতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে|” সম্প্রতি রাজস্থানে গণপিটুনির ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে আরও সরব হয় বিরোধীরা | আজ সংসদ চত্বরে ধর্না প্রদর্শন করেন তৃণমূল সাংসদরা| আজও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন একাধিক বিরোধী নেতানেত্রী | এদিকে আজ বিষয়টি মুখ খুললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রও। এদিন তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অত্যন্ত আস্থাশীল হওয়ার উপর রাশ টানা দরকার। আর সেটা জনগণকেই করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
দেশজুড়ে গণপিটুনির মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে| স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন একাধিক মানুষ| মঙ্গলবার গণপিটুনি ইস্যুতে আবারও মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং| লোকসভায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধী সাংসদরা| এবার সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং| লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘আমরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করছি| সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে| এই সমস্ত ঘটনা কমাতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে|’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা নিয়ে আমরা চিন্তিত| এই ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক নয়, বহু বছর আগে থেকেই গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটছে| এ কথা আমি আগেও বলেছি, সবচেয়ে বড় গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালে|’ প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই শুক্রবার, আনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা দিন গণপিটুনি ইস্যুতে বিরোধী শিবির কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব। যার মোকাবিলায় ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ টানেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । সেদিন রাজনাথ সিং বলেন, গণপিটুনির ক্ষেত্রে কেন্দ্র যা যা সহায়তা প্রয়োজন, দেবে, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা রুখতে রাজ্য সরকারগুলিকেই কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্র শিখ বিরোধী দাঙ্গার ইস্যুতে বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গড়েছে, শিখ সম্প্রদায়কে ন্যয়বিচারের আশ্বাস দিয়েছে বলেও সেদিন জানান তিনি।
যদিও এবিষয়ে এখনও সরব রয়েছেন বিরোধীরা | ক্রমবর্ধমান গণপিটুনির ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবারই সংসদ চত্বরে ধর্না প্রদর্শন করেন তৃণমূল সাংসদরা| সম্প্রতি রাজস্থানে গণপিটুনির ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ| এমতাবস্থায় গণপিটুনির ঘটনার প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে ধর্না প্রদর্শন করলেন তৃণমূল সাংসদরা| সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্না প্রদর্শন করেন তৃণমূল সাংসদরা| উপস্থিত ছিলেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, মণীশ গুপ্তা, প্রতীমা মণ্ডল প্রমুখরা| গণপিটুনি বন্ধ করতে হবে, ঘৃণ্য রাজনীতি বন্ধ করতে হবে-প্রভৃতি দাবিতে সরব হন তৃণমূল সাংসদরা|
গণপিটুনি প্রসঙ্গে বিজেপির নিন্দায় সরব হন বসপা সুপ্রিমো মায়াবতী। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বসপা সুপ্রিমো মায়াবতী বলেন, বিজেপির অপরিণত সিদ্ধান্তের জেরেই গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে চলেছে। খুন করার স্বাধীনতা দেওয়ার ফলে আক্রান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। বিজেপিকর্মী ও সমর্থকদের নিচু মানসিকতার জন্যই এরকম ঘটনা ঘটছে। আলওয়ার কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করছি। বিজেপি এই মামলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাই এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি ।
উল্লেখ্য, আজই রাজস্থানের আলওয়ারের ঘটনায় মৃত আকবর খানের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এসেছে। সেই রিপোর্টে জানা গিয়েছে শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে।
আলওয়ার গণপিটুনি কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আলওয়ারের কংগ্রেস সাংসদ করণ সিং যাদব। পুলিশের উচিত ছিল গণপিটুনিতে আক্রান্ত আকবর ওরফে রাকবর খানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তা মঙ্গলবার তিনি দাবি করেন, আলওয়ার কাণ্ডে পুলিশ এবং গোরক্ষকেরা এক যোগে কাজ করেছে। পুলিশের উচিত ছিল দ্রুত আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তা হয়নি। পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক। এই কেসটি শুধুমাত্র গনপিটুনির ঘটনা নয় পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুও জড়িয়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজস্থানের শাসকদল বিজেপি বিরুদ্ধে তোপ দেগে কংগ্রেস নেতা করণ সিং যাদব বলেন, বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে। তারা হিন্দু-মুসলমান ইস্যু তৈরি করছে। গরুকে ব্যবহার করে উত্তেজনা ছড়িয়ে ভোটের আগে ফায়দা তুলতে চাইছে । পরিস্থিতির আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি। গোরক্ষকদের রক্ষা করছে বিজেপি বলে দাবি করেন তিনি।
যদিও মঙ্গলবার রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাব চাঁদ কাটারিয়া দাবি করেন ঘটনার তদন্ত নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার | তিনি বলেন, তারা আমাকে জানিয়েছে তদন্তের ক্ষেত্রে প্রশাসন যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে তারা এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট। আমি বলেছি তারা চাইলে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তাদের যদি কোনও অভিযোগ থাকে সেটাও তারা আমায় জানাতে পারেন। এখন পর্যন্ত যা তথ্য আমার কাছে এসেছে তাতে মনে হচ্ছে পুলিশের হেফাজতেই তার (আকবর খান)-এর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।
গণপিটুনি নিয়ে এবার মুখ খুললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। রাজস্থানের আলওয়ার কাণ্ডের পর দেশজুড়ে গণপিটুনি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংসদেও এই বিষয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অত্যন্ত আস্থাশীল হওয়ার উপর রাশ টানা দরকার। আর সেটা জনগণকেই করতে হবে। সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা আমদের নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে গণপিটুনির একটা তরঙ্গ বইছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। কারণ এই বিষয়ে আমি রায়ও দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল টেস্কট ভিত্তিতে গণপিটুনির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর থেকে তৈরি হচ্ছে ‘মবো-ক্রেসি’-র (ভিড়তন্ত্র)। যাতে কিছু ক্ষেত্রে জীবনহানির ঘটনাও সামনে আসছে। প্রসঙ্গত, গণপিটুনি প্রসঙ্গে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কেন্দ্র বলা হয় এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরি করতে। গণপিটুনিকে ‘মবো-ক্রেসি’-র ভয়ঙ্কর রূপ বলে চিহ্নিত করে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই রাজস্থানের আলওয়ারে গরু পাচারকারী সন্দেহে রাকবর খান নামে এক ব্যক্তিকে গণপ্রহার করা হয়। সেই ব্যক্তি এতে গুরুতর জখম হন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিস। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় পুলিসকর্মীরা। যার জেরে চিকিত্সায় দেরি হওয়ায় রাকবরের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ।এই ঘটনায় পুলিশের এক এএসআই-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি তিন পুলিশ কনস্টেবলকে জেলা লাইনে পাঠানো হয়েছে।