নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ জুন৷৷ ভিলেজ কমিটিগুলির অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্য সরকার এডিসি প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুুরোধ জানিয়েছিল৷ কিন্তু, এডিসি প্রশাসন রাজ্য সরকারের আবেদনে সাড়া দেয়নি৷ ফলে, রেগার কাজ নিয়ে জটিলতা মিটছে না৷ তা সত্বেও রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত ১২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭২০ শ্রম দিবস তৈরী করেছে৷
রাজ্য প্রশাসনের জনৈক আধিকারিকের কথায়, ভিলেজ কমিটিতে রাজ্য সরকার সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷ পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার রয়েছে রাজ্য সরকারের৷ তাই পঞ্চায়েতে অর্ডিন্যান্স জারি করে প্রধান ও উপ প্রধানদের নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল তার সমাধান করেছে রাজ্য সরকার৷ একই ভাবে ভিলেজ কমিটিগুলিতেও নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভিলেজ চেয়ারম্যানরা অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কিন্তু, রাজ্য সরকার এই সমস্যা সমাধানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না৷ কারণ, ভিলেজ কমিটি আইনানুসারে এডিসি প্রশাসনের এক্তিয়ার ভূক্ত৷ তাই, রাজ্য সরকার এডিসি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভিলেজ কমিটিগুলিতে অচলাবস্থা কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷
ওই আধিকারিকের কথায়, পঞ্চায়েতে যেমন ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে তেমনি এডিসি প্রশাসনও আইন সংশোধন করুক, চাইছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য সরকারের তরফে এডিসি প্রশাসনকে বলা হয়েছে প্রশাসনিক রুল ১৬(১) সংশোধন করা হোক৷ তবেই, ভিলেজ কমিটির অচলাবস্থা কাটিয়ে তোলা সম্ভব৷ কিন্তু, এডিসি প্রশাসন রাজ্য সরকারের এই আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না৷ ফলে, রেগার কাজ স্বাভাবিক ভাবে করা যাচ্ছে না৷
এক তথ্য তুলে ধরে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরো এডিসি এলাকাতে ২৩টি ব্লক রয়েছে৷ ওই ব্লকগুলিতে কাজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এডিসি প্রশাসনের হাতে রয়েছে৷ এছাড়াও ১৭টি ব্লক আংশিক এডিসি এলাকায় রয়েছে৷ ফলে, সেখানেও এডিসি প্রশাসনের কাজে নিয়ন্ত্রনের এক্তিয়ার রয়েছে৷ ওই আধিকারিকের কথায়, এডিসি প্রশাসন রাজ্য সরকারের আবেদনে সাড়া দিলে ওই ৪০ টি ব্লকে রেগার কাজে আরোও গতি আসতে পারতো৷ রাজ্যে মোট ৫৮টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ১৮টি ব্লক রয়েছে এডিসি এলাকার বাইরে৷ ওই আধিকারিকের কথায়, পূর্বতন সরকারের আমলে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের মে পর্যন্ত রেগা প্রকল্পে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের কোষাগারে ছিল ২২২কোটি ২৫লক্ষ টাকা৷ কিন্তু, নতুন সরকারের আমলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মে পর্যন্ত গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের কোষাগারে রয়েছে ১৭৩ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা৷ গত অর্থ বছরে এপ্রিল ও মে মাসে মোট ৬লক্ষ ৪৯ হাজার ৬৭৬ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছিল৷ কিন্তু, বর্তমান অর্থ বছরে এপ্রিল ও মে মাসে ১২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭২০ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ ওই আধিকারিকের কথায়, গত অর্থ বছরে রেগায় টাকা ছিল বেশি, কিন্তু কাজ হয়েছে কম৷ সেই তুলনায় এ বছর টাকা কম থাকলেও গত অর্থ বছরের তুলনায় সমসাময়িক কালে এবছর কাজ বেশি হয়েছে৷
তথ্যের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ওই আধিকারিক জানান, পুরো এডিসি এলাকায় অবস্থিত ২৩টি ব্লকে এ বছর ৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৪১৭ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ তেমনি আংশিক এডিসি এলাকায় অবস্থিত ১৭টি ব্লকে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩১৭ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ এডিসি এলাকার বাইরে অবস্থিত ১৮টি ব্লকে ২ লক্ষ ৩হাজার ২৪৩ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজ্য সরকার ৬০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷
রাজ্যে পাহাড়ি জনপদে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে রেগার তথ্য তুলে ধরে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এডিসি এলাকার অধিন ছামনু ব্লকে সবচেয়ে বেশি রেগার কাজ হয়েছে৷ ওই ব্লকে ৭২ হাজার ৮৬৭ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ এছাড়া দামছড়া ব্লকে ১০হাজার ৫২১, দশদা ব্লকে ৩৮হাজার ৩৯০, জম্পুইহিল ব্লকে ৪হাজার ৬৩৭, ডম্বুর নগর ব্লকে ৪৯ হাজার ৩৯১, গঙ্গানগর ব্লকে ১১ হাজার ২৮২, রইস্যাবাড়ি ব্লকে ১৮ হাজার ৬৩৭, মুঙ্গিয়াকামী ব্লকে ২৮হাজার ৮৮৯, পদ্মবিলে ৩৫ হাজার ৬৩৪, তুলাশিখরে ৪২ হাজার ৪৫৪, হেজামাড়ায় ২৮ হাজার ৫২৫, জম্পুইজলায় ৫৩ হাজার ১৭৩, কিল্লাতে ১৯ হাজার ৫৮৮, শিলাছড়িতে ১৩ হাজার ৩৩৭, রূপাইছড়িতে ৪৬ হাজার ৭৮৬, করবুকে ২ হাজার ৩৪৬, বেলবাড়িতে ১৮ হাজার ২৫০, মনুতে ৯১ হাজার ৯, লালজুরিতে ১৫ হাজার ৯৮৭, ওম্পিতে ৬ হাজার ২১৯, মান্দাইতে ২২ হাজার ৭৬৪ এবং পেঁচারথল ব্লকে ৩০ হাজার ৪৭৫ শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ওই আধিকারিকের মতে, পাহাড়ি জনপদে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না৷