মাহুর-হারাঙ্গাজাও শতাব্দীপ্রাচীন মিটারগেজকে হেরিটেজ রেলসড়ক হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত রেলমন্ত্রকের

হাফলং (অসম), ১০ এপ্রিল (হি.স.) : বহু জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে শিলচর-লামডিং শতাব্দীপ্রাচীন মিটারগেজ রেলপথের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত এলাকাকে ‘হেরিটেজ রেলসড়ক’ হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। লামডিং-শিলচর শতাব্দীপ্রাচীন মিটারগেজ রেলপথের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও অংশকে হেরিটেজ রেলপথ হিসেবে সংরক্ষিত করতে ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন দল ও সংগঠন বহুদিন ধরে দাবি করছিল। অবশেষে তাদের দাবি বাস্তবে পরিণত হতে চলছে।
অসমের অন্যতম পাহাড়ি জেলা ডিমা হাসাওয়ের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মিটারগেজ রেলসড়ককে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখবে বলে এক খবর পাওয়া গেছে রেলমন্ত্রক সূত্রে। এই খবর পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরই স্বভাবতই খুশির হাওয়া বইছে সর্বত্র। মিটারগেজের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও অংশকে হেরিটেজ রেলপথ হিসেবে সংরক্ষণ করা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছে জাদিখে নাইশ হসম তথা ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন জাতি জনগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত যৌথ সমন্বয় সমিতি।
সমন্বয় সমিতির সভাপতি কল্যাণ দাওলাগপু বলেন, ভারতের পাঁচটি মিটারগেজ রেলপথের মধ্যে শতাব্দীপ্রাচীন লামডিং-শিলচর মিটারগেজের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত অংশকে হেরিটেজ লাইন হিসেবে সংরক্ষণ করার যে সিদ্ধান্ত রেলমন্ত্রক নিয়েছে এতে পাহাড়ে পর্যটনের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ শতাব্দীপ্রাচীন এই মিটারগেজ রেলপথ সবসময় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বলেন, হেরিটেজ রেলপথ হলে পাহাড়ে পর্যটনের সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, ঠিক তেমনি স্থানীয় মানুষের রোজগারের রাস্তাও খুলবে।
উল্লেখ্য, মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মিটারগেজ রেলপথকে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখার পাশাপাশি শতাব্দীপ্রাচীন সেতু ও টানেলগুলিকেও সংরক্ষিত রাখার পদক্ষেপ নিচ্ছে রেলমন্ত্রক। সংরক্ষিত এলাকাকে পর্যটকদের জন্য খোলা রাখা হবে। এতে পর্যটকরা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্যই রেলমন্ত্রক দেশের পাঁচটি মিটারগেজ রেলপথকে স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে রেখে দেওয়ার সসিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লাহনি দেশের পাঁচটি মিটারগেজ রেলপথকে সংরক্ষিত করে রাখার ওপর জোর দেন। এগুলির মধ্যে রয়েছে অসমের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইন। তার পর দেশের শতাব্দীপ্রাচীন পাঁচটি রেলপথকে চিহ্নিত করে রেলবিভাগ। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এই হেরিটেজ প্রকল্প চালু করবে রেলমন্ত্রক।
এদিকে মাহুর-হারাঙ্গাজাও মিটারগেজের অনেক স্থানে রেলওয়ে ট্র্যাক তুলে নেওয়া হয়েছে। এমন-কি বেশ কয়েকটি সেতু-সহ শতাব্দীপ্রাচীন দিয়ুং সেতু এবং লোয়ার হাফলং স্টেশনে বিদ্যমান দুটি ডিজেল ইঞ্জিন ও রেলের কামরা নিলাম করে দেয় উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল। তবে রেলমন্ত্রক কর্তৃক হেরিটেজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এখন আর কোনও সেতু নিলাম করা হবে না বলে জানা গিয়েছে রেলসূত্রে।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই মিটারগেজ রেলপথের মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত অংশকে হেরিটেজ রেলপথ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্তকে ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন দল ও সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে।