রাজ্যে গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানুষের মৌলিক অধিকার আক্রান্ত ঃ প্রকাশ কারাত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসের কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বিভিন্ন স্থানে সিপিএম পার্টি অফিসে অগ্ণিকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে৷ এর মধ্য জিরানীয়া মহকুমায় বেশী বলেই জানা গিয়েছে৷ মঙ্গলবার সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত ঐসব আক্রান্ত এলাকা সফর করেছেন৷ দলের পক্ষ থেকে এই সফর সংক্রান্ত বিষয়ে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গেরুয়াবাহিনীর ফ্যাসিস্টসুলভ কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে পার্টি পলিটব্যুরো সদস্য প্রধান কারাত বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্র , সংবিধান ও মানুষের মৌলিক অধিকার আক্রান্ত৷ প্রকাশ কারাত বললেন, দেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনে জয়, পরাজয় হতেই পারে৷ কিন্তু এর অর্থ কী এই যে সর্বভারতীয় পার্টি বামপন্থীদের নিশ্চিন্ত করে দেওয়ার জন্য ফ্যাসীবাদী কায়দায় দানবীর আক্রমন সংগঠিত করা হবে? রাজ্যের বুকে কী কোন সরকার আছে? সরকারের কী কোন দায়ত্বি নেই? তিনি এটাও বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় সরকারেরও কী কোন দায়িত্ব নেই? মানুষের সংবিধান স্বীকৃত অধিকারও কী এরাজ্যে থাকবে না? তিনি শাসক দল আর এস এস, বিজেপি ও আই পি এফ টি’র এবং রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীদের উপর ফ্যাসীস্টসুলভ সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের আবেদন জানান৷
১০ এপ্রিল, সকালে দিল্লি থেকে ত্রিপুরায় (আগরতলায়) এসে সি পি আই (এম) পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত জিরানীয়া মহকুমা এলাকার কিছু সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় সরজিমিলে পরিদর্শন করে বিস্ময় প্রকাশ করে উল্লেখিত কথা গুলি বলেন৷ উনার সফর সঙ্গী ছিলেন পার্টি পশ্চিম জেলা সম্পাদক পবিত্র কর, এডিসি’র সিই এম রাধাচরন দেববর্মা, সাংসদ শংকর দত্ত, মহকুমা সম্পাদক মধুসুদন দাস সহ প্রমুখ৷
সন্ত্রাস কবলিত এলাকা সফরকারীদল প্রকাশ কারাতকে নিয়ে আগরতলা থেকে যান খয়েরপুর বণিক্য চৌমুহনী এলাকায় পার্টি আর কে নগর লোক্যাল অফিসে৷ গেরুয়াবাহিনী বিজেপি’র দুর্বৃত্তবাহিনী লোক্যাল অফিস ভাঙ্গচুর ও লুঠপাট করেছে মূল্যবান সামগ্রী৷ এই এলাকায়ই হেমন্ত স্মৃতি পাঠাগার ও ব্যায়ামের জিম ছিল৷ তা ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুসৃকতিকারীরা৷ রাজ্যের জনশিক্ষা আন্দোলনেদ্দর অন্যতম নেতা হেমন্ত দেববর্মার স্মৃতি স্বরূপ এই পাঠাগার করা হয়েছিল৷
এরপর প্রতিনিধিদল যান পার্টি ললিতবাজার লোক্যালের অন্তর্গত মান্দাই ব্লকের অধীন রাজচন্তাই পার্টি জোন অফিসে৷ শাসক দলের দুর্বৃত্তরা সরকার বদলের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে অফিসে আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ পুড়ে ফেলে৷ এরপর বিনন কবরা জোন অফিস, পার্টি ললিত বাজার লোক্যাল কমিটি অফিস পরিদর্শন করেন৷ এই ২টি অফিসই ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্ণিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়৷ ললিত বাজারে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে ১২টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে৷ তাও প্রত্যক্ষ করেন৷ কালীকাপুড়ে সি পি আই (এম) সমর্থককের বাড়ীতে আগুন দিয়ে সব কিছু পুড়িয়ে ফেলে৷ সম্পূর্ণ বাড়ীর ঘরগুলি ভস্মিভূত করা হয়েছে৷ এরপর প্রকাশ কারাতকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআইটি-র পাশ্ববর্তী শংকর বাজারস্থিত সি পি আই (এম) এনআইটি লোক্যাল অফিসে৷ অফিসটির তালা ভেঙ্গে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছিল৷ পরবর্তীতে তারা সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেন, কৃষ্ণনগর পার্টি লোক্যাল কমিটি অফিস, ব্রজনগর ব্রাঞ্চ অফিস (সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়), এবং খয়েরপুর লোক্যাল অফিস৷ এগুলি ভাঙচুর করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা৷
প্রকাশ কারাত রাজ্যে সরকার বদলের পর গেরুয়াবাহিনী আর এস এস, বিজেপি ও আই পি এফ টি’র দুর্বৃত্তদের ফ্যাসিস্টসুলভ কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, নজীরবিহীন সন্ত্রাস চলছে বিজেপি-আর এস এস শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায়৷ সন্ত্রাস করে কমিউনিস্টদের ধবংস করা যায় না৷ হিটলারও পারে নি৷ এরাজ্যে গণতন্ত্র, সংবিধান বিপন্ন৷ এর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রিয়, দেশপ্রেমিক মানুষদের প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ সন্ত্রাস বন্ধে রাজ্য সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *