রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নারীর সুরক্ষা নিয়ে নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তা

কলকাতা: রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ধারাবাহিক নারী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে নবান্নে উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পুলিশ মহাপরিদর্শক, গৃহসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, কলকাতা পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন।

বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল হাসপাতালে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা জোরদার করা। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— বেশি ভিড়যুক্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে, ঠিকাদারী কর্মীদের পুলিশের মাধ্যমে যাচাই বাধ্যতামূলক করা হবে, অ-সরকারি এজেন্টদের হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

বুধবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে এক নাবালিকাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযুক্ত অমিত মল্লিক, যিনি শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের প্রাক্তন গ্রুপ-ডি কর্মী, তাকে সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। জানা গেছে, অভিযুক্ত নিজেকে চিকিৎসক সেজে নাবালিকাকে বিভ্রান্ত করেছিল। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ কমিশনার স্বয়ং হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।

এর আগে সোমবার হাওড়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক জুনিয়র চিকিৎসককে কর্তব্যরত অবস্থায় হুমকি ও হামলার মুখে পড়তে হয়। ওই চিকিৎসক জানান, “একজন রোগী পরীক্ষার সময় সহযোগিতা করছিলেন না, পরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমায় আক্রমণ করেন, একজন নিজেকে সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলে পরিচয় দেন।” পুলিশের তরফে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন ট্রাফিক হোমগার্ডও রয়েছেন।

এসএসকেএম কাণ্ডের তদন্তে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৈঠকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই সংক্রান্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার ভবন সবসময়ই ভিড়পূর্ণ। সেখানে নিরাপত্তা আরও বাড়ালে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তবু অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সে হাসপাতালের কর্মী নয়। ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবার তদন্তে আস্থা রাখছেন। আমি অনুরোধ করব, কেউ যেন এই ঘটনাকে রাজনীতিকরণ না করেন।”

তবে এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “রাজ্যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। আমি বাংলার মহিলাদের অনুরোধ করব— ‘আমাদের পাড়া, টিএমসি তাড়া’। বিজেপি এ রাজ্যে নারীর মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবে।”

ঘটনার জেরে রাজ্যজুড়ে হাসপাতাল নিরাপত্তা ও নারীর সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, এবং প্রশাসনের ওপর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ তৈরি হয়েছে।
________