বেঙ্গালুরু/মুম্বই, ১৪ অক্টোবর : রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নিষিদ্ধ করার দাবি ঘিরে কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া ও মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে যেখানে সরকারি সম্পত্তিতে আরএসএস-এর শাখা কার্যক্রম বন্ধের পক্ষে সওয়াল করছেন, সেখানে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস কড়া ভাষায় তার বিরোধিতা করেছেন। ফড়নবিস বলেন, “ইন্দিরা গান্ধী জি চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, আরএসএস নিষিদ্ধ করার চেষ্টা রাজনীতিকদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পুরো বিতর্ক শুরু হয় প্রিয়াঙ্ক খাড়গের একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে, যেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, যেন সরকারি স্কুল, মন্দির ও খেলার মাঠে আরএসএস শাখা ও কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। তাঁর অভিযোগ, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে যুব সমাজের মধ্যে বিভাজনের বীজ বোনা হচ্ছে। চিঠি প্রকাশের পর খাড়গে অভিযোগ করেন, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ফোনে গালিগালাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আরএসএস যখন গান্ধীজী ও বাবাসাহেব আম্বেদকরকে রেহাই দেয়নি, তখন আমি তো কিছুই না।”
বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়, যখন কর্ণাটক বিজেপি ২০০২ সালের একটি পুরনো ছবি প্রকাশ করে দাবি করে যে, প্রিয়াঙ্ক খাড়গের পিতা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজে এক সময় আরএসএস ক্যাম্পে গিয়ে সংগঠনের কাজের প্রশংসা করেছিলেন। জবাবে প্রিয়াঙ্ক বলেন, “এটি মিথ্যা প্রচার।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, তাঁর পিতা তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং শান্তি কমিটির বৈঠকের পর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে গিয়ে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা দিতে ওই স্থানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
এই বিতর্কের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া বলেন, তামিলনাড়ুর নজির অনুসরণ করে কর্ণাটকে সরকারি সম্পত্তিতে আরএসএস-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিবকে বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়ার স্বাস্থ্য উন্নতির দিকে এবং তিনি দু-এক দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। মন্ত্রিসভা রদবদল নিয়ে চলমান গুঞ্জনের জবাবে সিদ্ধারামাইয়া বলেন, “আজকের ডিনার মিটিংয়ের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হলে তা হবে দলের সিনিয়র নেতাদের মতামত ও হাইকমান্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে।”
বেঙ্গালুরুর একটি সাম্প্রতিক সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মুনিরত্নর অংশগ্রহণ নিয়ে গুঞ্জনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনও কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, আর কেউ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন কি না, তা আমার জানা নেই।” তিনি আশ্বাস দেন, কৃষ্ণা আপার বেসিন প্রকল্প যথাযথ অর্থায়নের মাধ্যমে আগামী চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ভাল্মিকি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এক বিধায়ক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, এবং মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে ওই সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হবে কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে।
এই বিতর্কের আবহে কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও বেড়েছে, এবং সামনে বিধানসভা নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আরএসএস-কে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক আরও বড় আকার নিতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

