ভারতীয় বায়ুসেনার ৯৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিংয়ের বক্তব্য : প্রযুক্তি, দক্ষতা ও সক্ষমতায় অগ্রগামী আজকের বায়ুসেনা

নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর : গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ারবেসে বুধবার অনুষ্ঠিত হল ভারতীয় বায়ুসেনার ৯৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিডিএস, স্থলবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধানরা। ঐতিহ্যবাহী বিমানগুলির দুর্দান্ত আকাশ প্রদর্শন এবং তিন বাহিনীর মার্চপাস্ট মন কেড়েছে উপস্থিত দর্শকদের।

বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং তাঁর ভাষণে বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনা আজ প্রযুক্তি, দক্ষতা ও সক্ষমতার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। আমি গর্বিত যে এমন এক বাহিনীর অংশ, যা কেবল আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত নয়, সাহস ও সমর্পণেও অতুলনীয়।” তিনি স্মরণ করান ১৯৪৮, ১৯৭১, ১৯৯৯-এর যুদ্ধ থেকে শুরু করে বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক ও সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর মতো অভিযানে বায়ুসেনার অনন্য ভূমিকার কথা।

এয়ার চিফ মার্শাল সিং জানান, ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এ ভারতীয় বায়ুসেনার সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ দেশের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেন, “এই অভিযান প্রমাণ করেছে যে নিবিড় প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে কত বড় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “আমরা সকলে মিলে এই বায়ুসেনাকে গড়ে তুলেছি। প্রতিটি বায়ুযোদ্ধার অবদান অমূল্য—শান্তির সময় হোক বা যুদ্ধে।” এদিন অপারেশন সিন্ধুর ও অন্যান্য অভিযানে অংশ নেওয়া বায়ুযোদ্ধাদের সম্মানিত করা হয়।

বায়ুসেনা প্রধান বলেন, “নিয়মিত প্রশিক্ষণই আমাদের সক্ষম রাখে। প্রতিটি বায়ুযোদ্ধাকে অঙ্গীকার করতে হবে—পরিস্থিতি যাই হোক, আমি দুর্বল হব না, এবং আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে।” ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সতর্কতা ও অবিরাম অনুশীলনই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

তিনি জানান, “আমাদের বায়ুসেনা দেশের প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী হিসেবে সর্বদা প্রস্তুত। আসাম, মেঘালয়, তামিলনাড়ু, মণিপুর ও সিকিমে দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বায়ুসেনা অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে।” শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ভারতীয় বায়ুসেনা মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে—মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কেনিয়ার মতো দেশে ত্রাণ ও মানবসম্পদ পাঠিয়ে ‘সেবা পরমো ধর্মঃ’-এর মন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।

এয়ার চিফ মার্শাল সিং বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনা তার সহানুভূতি, তৎপরতা ও নির্ভরযোগ্যতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে—আমরা কেবল সামরিক শক্তি নই, মানবতার রক্ষকও।” তিনি জানান, গত বছরে বায়ুসেনা একাধিক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়ে কৌশলগত দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি প্রাক্তন বায়ুসেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আজ আমরা যেখানে পৌঁছেছি, তা তাঁদের দূরদৃষ্টি, শৃঙ্খলা ও আত্মনিবেদনের উত্তরাধিকার।”

অবশেষে তিনি পশ্চিমাঞ্চলীয় বায়ু কমান্ড, অংশগ্রহণকারী সকল এয়ার স্টেশন, প্রধান দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজ্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই অনুষ্ঠান আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতীক এবং আমাদের অঙ্গীকারের ঘোষণা যে ভারতীয় বায়ুসেনা সর্বদা জাতির সেবায় প্রস্তুত থাকবে।”

তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের শেষে এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনা সর্বদা জাতির সেবায় অগ্রণী থাকবে। আমাদের সাহস, অঙ্গীকার ও ঐক্যেই দেশের সীমান্ত ও মর্যাদা চিরসুরক্ষিত।”