নয়াদিল্লি, ২৩ আগস্ট:নয়াদিল্লিতে জাতীয় মহাকাশ দিবসের দ্বিতীয় বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে মহাকাশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং ভারতের মহাকাশ খাতে বেসরকারি খাতের প্রবেশকে গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম”- এই তিন মন্ত্রকে ভিত্তি করে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি আজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে এবং বৈশ্বিক মহলে এক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতের প্রযুক্তি ও মহাকাশ ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে, বিশেষ করে সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্ধুর’ সময় দেশ যে কার্যকর এবং সুসংহত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, তা গোটা পৃথিবী দেখেছে। ড. সিং স্মরণ করিয়ে দেন, আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে ভারতের চন্দ্রযান মিশন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে, এবং ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এই অঞ্চলে পা রাখে। এই অর্জন শুধু একটি বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব নয়, বরং গোটা বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে ভারত আর অনুসারী নয়, বরং মহাকাশ অন্বেষণে এক নেতৃত্বস্থানীয় শক্তি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের মহাকাশযাত্রার ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা বলেন, আগামী দিনে ভারত একাধিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহাকাশ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গগনযান মিশন, যার মাধ্যমে প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠানো হবে। পাশাপাশি, ভারত ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজস্ব একটি মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যার নাম হবে ‘ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন’। শুক্লা জানান, ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিতে ভারতের মানুষের পদচিহ্ন রাখার লক্ষ্যও স্থির করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে জাপান এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা গুলিও ভারতের এই উদ্যোগে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র খোলা রয়েছে। তাঁর মতে, ভারতের জন্য এটি একটি সোনালি যুগ, যেখানে দেশীয় প্রযুক্তি, সম্পদ ও বৈজ্ঞানিক মেধা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইসরোর চেয়ারম্যান ড. ভি নারায়ণন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি বিশ্বের যেকোনও উন্নত মহাকাশ শক্তির সমতুল্য হয়ে উঠবে। চন্দ্রযান-৪ মিশন এবং শুক্র গ্রহে পাঠানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ‘ভেনাস অরবিটার মিশন’ সহ একাধিক বড় প্রকল্পের কথা তিনি জানান। ড. নারায়ণন বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে ‘ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন’-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে এবং তার প্রথম মডিউল ২০২৮ সালের মধ্যেই উৎক্ষেপণ করা হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ‘এনজিএল’ বা নেক্সট জেনারেশন লঞ্চার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন, যা ভারতের উৎক্ষেপণ প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করবে। ইসরো প্রধানের মতে, এই সব পরিকল্পনা এবং রূপায়ণের মাধ্যমে ভারত বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে এবং বিশ্ব মহাকাশ মানচিত্রে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মহাকাশ গবেষণায় ভারত এখন শুধু সাফল্যের খতিয়ান গড়ছে না, বরং আগামী দশকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের লক্ষ্যে এক সুসংগঠিত পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, সরকার ও ইসরোর সমন্বিত প্রচেষ্টা—এই তিনের সমন্বয়েই ভারত মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে।

