আগরতলা, ৯ আগস্ট : বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে ত্রিপুরার প্রতিটি কুমোরপাড়ায় চলছে প্রতিমা তৈরির জোর প্রস্তুতি। দশভূজা দেবীর প্রতিমা গড়তে শিল্পীদের মধ্যে চলছে এক নীরব প্রতিযোগিতা। দিন-রাত এক করে তারা সযত্নে মূর্তি গড়ছেন, যেন প্রতিটি বাঁকে ফুটে ওঠে দেবীর মহিমা।
তবে এবছর পরিস্থিতি খুব একটা অনুকূল নয়। কাঁচামালের দাম লাগামছাড়া হারে বেড়ে গেলেও অধিকাংশ পূজা কমিটি মূর্তির দাম বাড়াতে রাজি নয়। ফলে লাভের অঙ্ক ক্রমশ কমছে, অথচ এই শিল্পই বহু পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। তবুও উৎসবের আনন্দ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে মৃৎশিল্পীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরে এ বছরও স্থানীয় শিল্পীরা গড়ছেন উঁচু ও নান্দনিক দুর্গা প্রতিমা। কৃষ্ণপুর জোর কালভার্ট এলাকার অভিজ্ঞ মৃৎশিল্পী রতন পাল জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি প্রতিমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। এবছর তিনি ২৫টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন, পাশাপাশি বিশ্বকর্মা ও মা মনসার প্রতিমাও গড়ছেন। তাঁর সর্বোচ্চ প্রতিমার দাম ৭৫-৮০ হাজার টাকা হলেও, সবগুলোরই আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
রতনবাবুর ভাষায়, “মাটি, বাঁশ, খড়, রং, লোহা, সুতলি, কাপড়— সব কিছুর দাম আগুনের মতো বেড়েছে, কিন্তু মূর্তির দাম অপরিবর্তিত। ফলে গত বছরের তুলনায় লাভ অনেকটাই কমেছে।” তিনি আরও জানান, তাঁর তৈরি প্রতিমা শুধু ধর্মনগর নয়, পানিসাগর মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও বিক্রি হয়। তবে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের চাপে নব প্রজন্ম এই পেশা থেকে সরে যাচ্ছে।
দুঃখের বিষয়, এত বছর কাজ করেও কোনো সরকারি সহায়তা পাননি তিনি। রতনবাবুর দাবি, “সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলে কারখানা বড় করে আরও কারিগর নিয়োগ দিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে, পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে।”
শিল্পীদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম ও সৃজনশীলতায় রাজ্যজুড়ে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার মহিমা। এখন শুধু অপেক্ষা পূজার দিনের আনন্দমুখর মুহূর্তগুলোর জন্য।

