হরিদ্বার, ৪ আগস্ট : উত্তরাখণ্ডে গত দু’দিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে, এবং মেট অফিসও আগামী দুই দিন আরও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
উত্তরাখণ্ডের হালদ্বানি এলাকায় সোমবার ভোররাতে বৃষ্টির কারণে এক ব্যক্তি ভেসে গিয়ে প্রাণ হারান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি ভোরে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন এবং বিখ্যাত ভাখরা ঝরনা পাড়ি দেওয়ার সময় প্রবল স্রোতে ভেসে যান। এছাড়া, রবিবার দুপুরে হালদ্বানি রোডের ভুজিয়াঘাট এলাকায় দুই ব্যক্তি একটি স্রোতাচ্ছন্ন ঝরনায় ডুবে মারা যান।
রাজ্যের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় রাতের দিকে এক বড় ভূমিধস ঘটে, যেখানে দুটি দোকান মাটির তলায় চাপা পড়ে। এই দুর্ঘটনায় দোকান মালিক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ভূমিধসের ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং উদ্ধার কাজ চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি দল পাঠানো হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে দেহরাদুন ও অন্যান্য এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নদীগুলোর পানি বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গঙ্গা, কালি এবং অন্যান্য নদী ও ঝরনাগুলোর প্রবাহ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছে, ফলে রাজ্যের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে হারিদ্বারের গঙ্গা নদী এবং উধম সিং নগর জেলার লেভদা নদী ও এর শাখাগুলির পানির স্তর বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছে গেছে।
উধম সিং নগর জেলার বিভিন্ন অংশে জলবদ্ধতার কারণে জনজীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। বিশেষত, চকরপুর, লাখানপুর, মুরিয়া পিস্টর এবং বাহাইনি গ্রামে অবস্থিত অনেক পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ২০টি গ্রামকে প্লাবিত করেছে নদীর অতিরিক্ত পানি। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য উদ্ধারকর্মীরা ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
মেট অফিসের পক্ষ থেকে আগামী দুই দিন উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জেলা, বিশেষত নৈনিতাল, চাম্পাওয়াট, বাগেশ্বর, উদম সিং নগর, পৌরি এবং দেহরাদুনের জন্য ‘অরেঞ্জ এলার্ট’ জারি করা হয়েছে। আগামী সোমবার এবং মঙ্গলবার এই অঞ্চলে ভারী থেকে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার প্লাবন এবং ভূমিধসের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
মেট অফিস জানায়, যে সমস্ত এলাকায় চলমান বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বাড়ছে, সেসব এলাকায় আরও ভূমিধস এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় মানুষদের পরামর্শ দিয়েছেন যাতে তারা বিপদসংকুল এলাকাগুলি ত্যাগ করেন এবং জরুরি পরিষেবাগুলির কাছাকাছি থাকেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী সোমবার এক ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যের সমস্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাঁদেরকে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “বৃষ্টি চলাকালে সমস্ত জেলা প্রশাসনকে মাঠে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। জলাবদ্ধতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ব্যাপারে দ্রুত পর্যালোচনা করা উচিত।”
এছাড়া, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় স্কুল এবং আঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে, যাতে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী দু’দিনের মধ্যে উত্তরাখণ্ডে আরো ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায়, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলির বাসিন্দাদের ভূমিধসের আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে।
এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ডে পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে, এবং রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিলেও, জনগণকে সবসময় সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।

