আগরতলা, ৩০ জুলাই: সরকার পাহাড়ি জুম চাষিদের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন সড়ক প্রকল্প ও জুমভিত্তিক সমবায় গঠনের মাধ্যমে এই অঞ্চলগুলোকে ধীরে ধীরে মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। আঠারোমুড়া পাহাড়ের রিয়াং জনবসতি হাধুপা এলাকা পরিদর্শনে একথা বলেন মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা।
আঠারোমুড়া পাহাড়ে জীবন-সংগ্রাম এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন জনজাতিরা। জুম চাষে ভরসা রিয়াং সম্প্রদায়ের। আধুনিক সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে, ত্রিপুরা রাজ্যের আঠারোমুড়া পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলে আজও শতাধিক রিয়াং জনজাতি পরিবার প্রাচীন ‘জুম চাষ’-এর উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথ, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অভাব, আর দুঃসাধ্য জীবনের মাঝেও তারা টিকে আছেন ঐতিহ্যবাহী কৃষিপদ্ধতির উপর ভরসা করে।
এই এলাকাজুড়ে বসবাসরত পরিবারগুলির মূল জীবিকা ‘জুম চাষ’, যেখানে বনভূমি পরিষ্কার করে আগুন দিয়ে জমি তৈরি করে ধান, আদা, কুমড়ো, লঙ্কা, বরবটি সহ নানা পাহাড়ি ফসল চাষ করা হয়। বছরের পর বছর তারা এইভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন, অথচ সরকারিভাবে কৃষিঋণ বা বিশেষ কোনো সহায়তা আজও তাঁদের হাতে পৌঁছায়নি।পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে এখনও পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানীয় জল কিংবা পাকা সড়ক। চিকিৎসা ও শিশুদের শিক্ষালাভ—দুই-ই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, বহু পরিবার খাদ্যসংকটেও পড়ে।জানা গেছে, আগে একটি জমিকে ১৫-২০ বছর বিশ্রামে রেখে পুনরায় ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বনভূমির পরিমাণ হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন মাত্র ২-৩ বছর পরই সেই জমিতে আবার চাষ করতে হচ্ছে, ফলে মাটির উর্বরতা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে, আঠারোমুড়া পাহাড় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি পরিবার এখনও ডিজিটাল জুম প্রকল্প, কৃষি সহায়তা বা খাদ্য নিরাপত্তা তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও কিছু এলাকায় টিটিএডিসির তরফে কৃষি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে, তবে তা পাহাড়ের গভীরে পৌঁছাতে পারেনি।
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা ও এমডিসি ভূমিকা নন্দ রিয়াং পরিদর্শনে যান হাধুপা এলাকায়। তারা সরাসরি ব্রু রিয়াং সম্প্রদায়ের মানুষদের সাথে কথা বলেন, তাঁদের জীবনযাত্রা, সমস্যাবলী এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। দেখা যায়, বহু পরিবার এখনও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কর্মসংস্থানের পথও সীমিত।মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা বলেন, “সরকার পাহাড়ি জুম চাষিদের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন সড়ক প্রকল্প ও জুমভিত্তিক সমবায় গঠনের মাধ্যমে এই অঞ্চলগুলোকে ধীরে ধীরে মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।”
তিনি ছেলেমেয়েদের শিক্ষালয়ে পাঠানো, বাল্যবিবাহ রোধ ও নেশামুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।জুম চাষ একদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, অন্যদিকে একটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা কৃষিপদ্ধতি। কিন্তু এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন আধুনিক কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় ও সরকারিভাবে যথাযথ সহায়তা।বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এই দুর্বোধ্য অঞ্চলের মানুষদের জীবনে আলোর ছোঁয়া পৌঁছে দিতে নতুন উদ্যোগই এখন আশার আলো।

