উপাচার্যরা ভারতের বৌদ্ধিক ভবিষ্যতের দিশারী : ড. সুকান্ত মজুমদার

কেভাড়িয়া(গুজরাট), ১১ জুলাই : শিক্ষা মন্ত্রকের উদ্যোগে ১০-১১ জুলাই কেভাড়িয়া, গুজরাটে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের দু’দিনব্যাপী সম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার, শিক্ষা মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যগণ।

সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. সুকান্ত মজুমদার বলেন, উপাচার্যরা ভারতের বৌদ্ধিক ভবিষ্যতের দিশারী। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সর্দার প্যাটেল ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শিক্ষার রূপান্তরকারী শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। তাঁর সেই দৃষ্টিভঙ্গিই আজ জাতীয় শিক্ষা নীতি(এনইপি) ২০২০-র ভিত্তি, যা ভারতীয় মূল্যবোধে শিকড় গেড়ে রেখে ভারতীয় শিক্ষাকে বিশ্বমানের প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্য নিয়েছে।

ড. মজুমদার জানান, উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ২০১৪-১৫ সালে ১.৫৭ কোটি থেকে ২০২১-২২ সালে ২.০৭ কোটিতে পৌঁছেছে, যা ৩২% বৃদ্ধি। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি-সমন্বিত শিক্ষা দ্রুততর হয়েছে এসডব্লিউএওয়াইএএম-এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। বর্তমানে ২৯৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এসডব্লিউএওয়াইএএম-এর মাধ্যমে ৪০% পর্যন্ত একাডেমিক ক্রেডিট অনুমোদন করছে এবং বছরে প্রায় ৯ লক্ষ সার্টিফিকেট ইস্যু হচ্ছে। এনইপি ২০২০-র আওতায় জেইই, নিট ও সিইউইটি এখন ১৩টি আঞ্চলিক ভাষায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৬-এ ভারতের ৫৪টি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে, যা ২০১৫-র তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এছাড়া, একাডেমিক ব্যাংক অফ ক্রেডিট (এবিসি)-এ ২.৭৫ কোটিরও বেশি ছাত্রছাত্রী নিবন্ধিত এবং ১৬৬৭টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত, যার অনেকগুলি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

ড. মজুমদার আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এনইপি ২০২০ শুধুমাত্র সংস্কার নয়, বরং ভারতীয় শিক্ষায় এক নবজাগরণ, যা শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক চিন্তায় সক্ষম করে তোলে, আবার ভারতীয় সভ্যতার মূলে স্থিত থাকে। তিনি উপাচার্যদের এনইপি ২০২০-র দ্রুত বাস্তবায়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবন শক্তিশালীকরণ, শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সাম্য ও উৎকর্ষকে মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান।

সমাপনী অধিবেশনে উচ্চশিক্ষা সচিব ড. বিনীত জোশী বলেন, এনএইচকিউএফ, এনসিআরএফ এবং চার-বছর মেয়াদি স্নাতক কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুধুমাত্র নীতিগত অগ্রাধিকার নয়, এটি একটি কাঠামোগত পরিবর্তন। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পাঠ্যক্রম, শিক্ষণ-পদ্ধতি ও ইন্টার্নশিপ বাস্তব দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এসডব্লিউএওয়াইএএম ও এপিএএআর-এর মতো প্ল্যাটফর্মকে শিক্ষার মূল ধারায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নমনীয়তা, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও নাগরিক-কেন্দ্রিকতা আনতে হবে। সামর্থ-এর মতো টুলস এই রূপান্তরের সহায়ক। উচ্চশিক্ষায় সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে ভর্তি থেকে শিক্ষক বৈচিত্র্য ও ক্যাম্পাস পরিবেশ পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্র ও ভারতীয় ভাষা শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, একাডেমিক শক্তি ও পরিচয়ের উৎস। লাইব্রেরি সমৃদ্ধকরণ, জ্ঞান ক্লাব, ভাষা ল্যাব ও উদ্ভাবনী ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ‘বিকসিত ভারত ২০৪৭’-এর জন্য কৌশলপত্র প্রস্তুত করবে। কৌশলপত্রে বহুমাত্রিক বিষয় সংহতি, ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্রের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভিসি সম্মেলন আয়োজনের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল উপাচার্যদের মধ্যে এনইপি ২০২০-র মূল স্তম্ভ অ্যাক্সেস, সাম্য, গুণমান, সাশ্রয় ও দায়বদ্ধতা—নিয়ে আলোচনা, যা তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এনইপি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে ভাগ করে নেন।

দুই দিনের এই সম্মেলনে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, অসম বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, ইগনু, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, ঝাড়খণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়, হেমবতী নন্দন বহুগুণ গঢ়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয়, টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ও কেন্দ্রীয় হিন্দি সংস্থান-সহ বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব ছিল। ১০ জুলাই সকালের যোগাসন দিয়ে শুরু হওয়া এই সম্মেলন এনইপি ২০২০-র মূল ভাবনা শরীর, মন ও আত্মার সমন্বয়ে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রতিফলিত করে।