পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত ত্রিপুরার অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা

নয়াদিল্লি, ২৮ এপ্রিল : ভারতের রাষ্ট্রপতি আজ নয়াদিল্লিতে নাগরিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ত্রিপুরার অধ্যাপক অরুণোদয় সাহাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ নীচে দেওয়া হল: অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা একজন অর্থনীতিবিদ এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, যার পাঠক সারা ভারত ও বিদেশে রয়েছে। তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের (একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য এবং ত্রিপুরা রাজ্য উচ্চশিক্ষা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।

১৯৪৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক সাহা। তিনি বিশালগড় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তাঁর স্কুল জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি আগরতলার উমাকান্ত একাডেমিতেও কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন। তিনি ত্রিপুরার এমবিবি কলেজ থেকে প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সে ভর্তি হন এবং পরে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

অধ্যাপক সাহা তাঁর সাড়ে চার দশকের দীর্ঘ পেশাগত জীবনে শিক্ষা ও সাধারন প্রশাসনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন, তাঁর প্রথম নিয়োগ ছিল উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরের বীর বিক্রম ইনস্টিটিউটে। সেখানে অল্প সময়ের জন্য কাজ করার পর, তিনি রাম ঠাকুর কলেজে অর্থনীতি ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদান করেন, তখন এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি অধ্যয়ন কেন্দ্র ছিল। ১৯৮৭ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্পূর্ণ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় এবং ২০০৭ সালে এটি একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি এবং উন্নতির জন্য সকল পর্যায়ে পরিষেবা প্রদান করেছেন। তিনি সেখানে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন এবং ২০০৭ সালে, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম এবং প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যের দায়িত্ব তাঁকে অর্পণ করা হয়, যাতে তিনি সামনে থেকে এটি পরিচালনা করতে পারেন।

অধ্যাপক সাহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ভারতে ফিরে আসেন তাঁর নতুন অর্জিত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞা নিয়ে তাঁর নিজ রাজ্য এবং দেশের জনগণের সেবা করার জন্য এবং তাঁর পেশাগত কর্মজীবন জুড়ে তিনি তা সফলভাবে করে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তাঁর লেখাগুলি ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক সীমানা ও বাঁধা অতিক্রম করে ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সম্প্রীতির আস্বাদন গ্রহণ করেছে যা পাঠকদের মন এবং চিন্তাভাবনার উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। ত্রিপুরার সাহিত্যের ভান্ডারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি অপরিসীম অবদান রেখেছেন। তিনি তাঁর সমবয়সী এবং পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর লেখা এবং সাহিত্যকর্ম ত্রিপুরা রাজ্যের জাতি উপজাতি উভয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী বন্ধনকে প্রতিফলিত করে। তিনি বিশ্বজুড়ে তাঁর পাঠকদের ভালোবাসা এবং প্রশংসা পেয়েছেন।

শিক্ষা ও সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, অধ্যাপক সাহাকে ত্রিপুরা সরকারের সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার ‘ত্রিপুরা বিভূষণ সম্মান-২০২৪’ প্রদান করা হয়।