অসম বিধানসভায় ৬২০.২৭ কোটি টাকার ঘাটতি সহ ২.৬৩ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ অৰ্থমন্ত্ৰী অজন্তার

– মাসে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জনকারীদের কর রেহাই

– শিলচর, ডিব্রুগড়, গোলাঘাট, পলাশবাড়ি, জাগিরোড, তেজপুর এবং নলবাড়িতে ইন্ডাস্ট্ৰিয়াল পার্ক স্থাপন

– হাতি-মানব সংঘাত প্রশমনে ‘গজমিত্র’ দল গঠন

– পেনশন সংস্কার, এনপিএস-এর অধীনে ওপিএস-সুবিধা

– অসমের প্রত্যেক রেশন কার্ডধারীকে সহায়তার প্ৰস্তাব

– চা শ্রমিকদের এককালীন ৫ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য

– চুক্তিভিত্তিক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কর্মচারীদের জন্য বিমা

– বই কেনার জন্য সরকারি কর্মচারীদের ১,০০০ টাকা

– কৃষকদের জন্য অর্থ সাহায্য

– ডিব্রুগড় হচ্ছে অসমের দ্বিতীয় রাজধানী, বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা

গুয়াহাটি, ১০ মাৰ্চ (হি.স.) : আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের ২.৬৩ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ। পেশকৃত বাজেটে ৬২০.২৭ কোটি টাকার ঘাটতি দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে যে সব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেগুলি যথাক্রমে কর ছাড়, শিল্প-উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ, বেকারত্ব মোকাবিলা করা, পরিকাঠামো উন্নত করা ইত্যাদি।

২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগের এটি শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। চলতি মেয়াদের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নেওগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর ছাড়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং শিল্প সম্প্রসারণের প্রতি সরকার-প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়ে অসমের অব্যাহত উন্নয়নের জন্য ভিত্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

বাজেট ২০২৫-২৬-এ যে সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেগুলি যথাক্রমে –

কর-স্বস্তি সহ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা :

বাজেটে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জনকারীদের জন্য পেশাদার কর থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ফলে ১.৪৩ লক্ষের বেশি করদাতা এবং পরিবার উপকৃত হবেন এবং তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

অসমের চা শিল্পকে সহায়তা করতে সবুজ চা (গ্ৰিন টি) পাতার কর অবকাশ আরও দু বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে :

অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০-এর অধীনে ডিব্রুগড়, গোলাঘাট, শিলচর, পলাশবাড়ি, জাগিরোড, তেজপুর এবং নলবাড়িতে নতুন ইন্ডাস্ট্ৰিয়াল পার্ক স্থাপন করবে রাজ্য। এতে শিল্প বৃদ্ধির জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়া, এশীয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর আর্থিক সহায়তায় পলাশবাড়ি এবং জাগিরোডে একটি টাউনশিপ প্রকল্প তৈরি করা হবে। এর জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নগর অবকাঠামো উন্নয়ন করবে সরকার।

হাতি-মানব সংঘাত প্রশমনে ‘গজমিত্র’ দল গঠন :

হাতি-মানব সংঘর্ষের ক্রমবর্ধমান ঘটনা মোকাবিলায় সরকার পাঁচটি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় গজমিত্র গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জেলাগুলি যথাক্রমে গোয়ালপাড়া, তেজপুর, উদালগুড়ি, বাকসা এবং নগাঁও। হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই-চালিত ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ কমাতে হাতির আবাসস্থল উন্নত করার প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল পরিচালনা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে নিবেদিতপ্রাণ গজমিত্র দল গঠন করা হবে।

অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মচারী, কৃষক এবং চা বাগানের শ্রমিকদের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন।

পেনশন সংস্কার, এনপিএস-এর অধীনে ওপিএস-সুবিধা :

একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্য সরকার যোগ্য কর্মচারীদের জন্য নতুন পেনশন প্রকল্প (এনপিএস)-এর অধীনে পুরাতন পেনশন প্রকল্পের (ওপিএস) সুবিধা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে প্রায় ২.৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারী উপকৃত হবেন।

চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য সহায়তা :

অসমের চা বাগানের শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার ৬.৮ লক্ষ চা বাগানের অস্থায়ী এবং স্থায়ী উভয় ক্যাটাগরির শ্রমিকদের এককালীন ৫,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। এই উদ্যোগের জন্য মোট ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে।

রেশন কার্ডধারীদের জন্য সুখবর :

অক্টোবর থেকে অসমের প্রত্যেক রেশন কার্ডধারী রাজ্য সহায়তার অংশ হিসেবে ১ কেজি করে মসুর ডাল, ১ কেজি করে চিনি এবং ১ কেজি করে লবণ পাবেন। এই প্ৰক্ৰিয়া সহজতর করতে ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলির জন্য কমিশন হিসাবে ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে।

চুক্তিভিত্তিক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীদের জন্য বিমা :

আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমাৰ্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন গ্রহণকারী সমস্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী এবং সরকারি খাতের কর্মচারীরা এখন জিরো-কস্ট দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বিমা প্রকল্পের আওতায় আসবেন।

শিক্ষা ও সাহিত্যক্ষেত্ৰকে উৎসাহিত করা :

সৃজনশীল বিজ্ঞান এবং শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য একজন উদীয়মান তরুণ লেখককে এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব।

পাঠক সংস্কৃতিকে বিকাশের জন্য জন্মদিন এবং বিবাহে নাগরিকদের বই উপহার দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বই কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে সরকারি কর্মচারীরা ১,০০০ টাকা করে পাবেন।

কৃষকদের জন্য অর্থ সাহায্য :

অসমের কৃষকদের সহায়তা এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রধান ফসলের জন্য সরাসরি আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব রেখেছে সরকার। প্রস্তাবগুলি যথাক্রমে ধানের জন্য প্রতি কুইন্টাল ২৫০ টাকা, ভুট্টার জন্য প্রতি কুইন্টাল ২৫০ টাকা এবং সরষের দাম প্রতি কুইন্টালে ৫০০ টাকা।

অসমের দ্বিতীয় রাজধানী হতে চলেছে ডিব্রুগড় :

এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে অসম সরকার ডিব্রুগড়ে একটি নতুন বিধানসভা ভবন এবং এমএলএ হোস্টেল নির্মাণের জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে অসমের দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা পাচ্ছে ডিব্রুগড়।

এই বাজেটে প্রস্তাবিত বিধানগুলির লক্ষ্য অসমের আর্থ-সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং একই সাথে কর্মচারী, কৃষক এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলিকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করা, বাজেট ভাষণে বলেছেন অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *