বিশেষ প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ৭ সেপ্ঢেম্বর৷৷ কৈলাসহরের উপজাতি অধ্যুষিত মাইলং এডিসি ভিলেজের পঞ্চমনগর এলাকায় এক
গৃহবধূকে হত্যা করে হত্যার দায় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মৃতদেহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷ এই ব্যাপারে মৃতার স্বামী, দেবর ও বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ঐ এলাকায়৷
উপজাতি সমাজ ব্যবস্থাতেও গৃহবধূ নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে৷ কৈলাসহর মাইলং এডিসি ভিলেজের পঞ্চমনগর এলাকায় গত ৩০ আগষ্ট এক গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার স্বামী৷ মৃতার নাম আরতি দেববর্মা৷ তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে৷ দুই ভাই টিএসআরে চাকুরীরত৷ চাকুরী সূত্রে তারা অন্যত্র থাকে৷ মৃতার স্বামী জুয়েল সিং দেববর্মা পারিবারিক কলহের জেরে ৩০ আগষ্ট রাতে স্ত্রীকে প্রচন্ড মদ্যপান করিয়ে লাঠি পেটা করে হত্যার চেষ্টা করে৷ শেষ পর্যন্ত গলায় বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে৷ জুয়েল সিং বালির ব্যবসা করে৷ ঘটনাটি ৩১ আগষ্ট জুয়েল সিং দেববর্মা তার ছোট ভাই টিএসআর জওয়ান কিশোর দেববর্মাকে জানায়৷ খবর পেয়ে কিশোর দেববর্মা এসে পরামর্শ দেয় মৃতদেহটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার জন্য৷ ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বাড়িতেই থাকত৷ ছোট ভাইয়ের স্ত্রী দিপুরানী দেববর্মাও ঘটনাটি জানত৷ যে লাঠি দিয়ে গৃহবধূ আরতিকে হত্যা করেছে সেই লাঠিটি মৃতদেহের কাছেই ছিল৷ দিপুরানী সেটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল৷ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য নাটক সাজিয়ে জুয়েল সিং দেববর্মা তার শ্বশুর বাড়িতে খবর পাঠায়৷ শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসে মৃতদেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেল৷ মৃতদেহটি দেখে তাদের মনে সন্দেহ হয়৷ তারা পুলিশকে খবর দেন৷ পুলিশ আসার আগেই জুয়েল সিং দেববর্মা মৃতদেহটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামিয়ে ফেলে৷ পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়৷ ময়না তদন্তের রিপোর্টেও তথ্য মিলেছে ১লা সেপ্ঢেম্বর নয়, ৩০ আগষ্ট তাকে হত্যা করা হয়েছে৷ পুলিশ মৃতার স্বামী ও শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা শুনতে পেয়েছে৷ কথাবার্তায় অসংলগ্ণতা পাওয়ায় প্রথমত মৃতার স্বামী জুয়েল সিং দেববর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময় জুয়েল সিং দেববর্মা আসল রহস্য ফাঁস করে দেয়৷ তারপর পুলিশ জুয়েল সিং এর ছোট ভাই কিশোর দেববর্মা এবং তার স্ত্রী দিপুরানী দেববর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে৷
অভিযুক্তদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশের পদস্থ আধিকারীকরা আজ ঘটনাস্থলে যান৷ সেখান থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লাঠিটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু লাঠিটি পাওয়া যায়নি৷ তবে যে বালিশ দিয়ে গলাচাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল সেই বালিশের একাংশ পোড়া অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে৷ বিচারক অর্ঘ্য সাহাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব দেব, এসডিপিও রাজীব সেনগুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷
2016-09-08

