বিশেষ প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ২০ জুলাই৷৷ ফের ছাত্র রাজনীতির উত্তপ্ত হওয়া রাজ্যে৷ দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের রূপ নিল ধর্মনগর কলেজে৷ সংঘর্ষে গুরুতর জখম হয়েছেন তিনজন৷ উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে ধর্মনগর শহর সহ আশেপাশের এলাকা৷ অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনকে লালীকরণ করার৷ থানায় মামলা করা হয়েছে উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকে৷
বুধবার সকালে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ ও সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সংঘর্ষ বাধে ধর্মনগর কলেজে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে কলেজে৷ খন্ডযুদ্ধে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দুই ছাত্র নেতা এবং এসএএফআইয়ের এক ছাত্রনেতা রক্তাক্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তথা এবিভিপি এর দুই ছাত্র নেতার অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাদের ধর্মনগর হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে৷ তারা হল সৌরভ নাথ ও দিলীপ নাথ৷
সংবাদে প্রকাশ, এদিন সকালে কলেজ অভ্যন্তরে সদস্য পদ সংগ্রহের জন্য ঘাঁটি গাড়ে এসএফআই৷ একই ভবে অধ্যক্ষ শম্ভুনাথ রক্ষিতের অনুমতি নিয়ে সদস্য পদ সংগ্রহের জন্য কলেজে যায় বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি৷ বরাবরের মতোই এসএফআই অসহিষ্ণু হয়ে উঠে বিরোধী শিবিরের সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযানকে ঘিরে৷ এসএফআই এবিভিপির নেতা কর্মীদের কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়৷ তাতে তারা রাজি হয়নি৷ এরপরই শুরু হয় বিবাদ৷ এসএফআই সমর্থিত ছাত্ররা অতর্কিত হামলা চালায় এবিভিপি এর কর্মী সমর্থকদের উপর৷ হামলায় রক্তাক্ত হয় সৌরভ নাথ ও দিলীপ নাথ৷ তাদেরকে বেধরক মারধর করা হয়৷ লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়৷ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে৷ এসএফআইয়ের হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সৌরভ ও দিলীপ কলেজ থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এক বাড়িতে গিয়ে আত্মরক্ষা করে৷
এদিকে, এসএফআইয়ের কর্মীদের হামলার খবর পেয়ে কলেজে ছুটে যায় এবিভিপি এর বেশ কিছু কর্মী৷ তারা গিয়ে এসএফআইয়ের নেতা কর্মীদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়৷ তাতে এসএফআইয়ের এক ছাত্রকর্মী আহত হয়েছে৷ হামলা পাল্টা হামলার জেরে গোটা কলেজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ ছাত্রছাত্রীরা ছুটাছুটি করে কলেজ থেকে পালাতে থাকে৷ আশেপাশের লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে উঠেন৷ এদিকে, খবর পেয়ে ধর্মনগর থানার পুলিশ ও এসডিপিও কলেজে ছুটে যান৷ পুলিশ দুই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে৷
অন্যদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ শম্ভুনাথ রক্ষিত জানিয়েছেন তিনি পুলিশকে তলব করেনি কলেজে আসার জন্য৷ তাঁর এই বক্তব্য শোনে পুলিশও রীতিমতো বিড়ম্বণায় পড়ে যায়৷ যদিও পরবর্তী সময়ে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন তিনিই পুলিশ তলব করেছেন৷ কলেজের অধ্যক্ষের দুই রকম বক্তব্যে পুলিশও ক্ষুব্ধ৷ কলেজের অভ্যন্তরে সঠিক বিচার না পেয়ে এবিভিপি এর কর্মীরা এসএফআই’র হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবীতে ধর্মনগর থানায় ধর্ণা দিয়েছে৷ এসএফআই’র ছাত্রদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে৷ এদিকে এসএফআইয়ের তরফেও পাল্টা মামলা করা হয়েছে৷ তবে খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকেউ গ্রেপ্তার করেনি৷ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক চাপে পড়ে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে না৷
সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের হামলার ঘটনার সাথে যুক্ত এসএফআইয়ের কর্মীদের বিরুদ্ধে যদি কঠোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে৷ এদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা ধর্মনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ পুলিশ পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছে৷