নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ১৯ জুলাই৷৷ ৪৪নং জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৈলাসহর সহ সারা রাজ্যের পেট্রোল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে৷ সব পাম্পে পেট্রোল নেই, যার ফলে যানবাহন চলাচলে ঘটছে বিঘ্ন৷ সমস্যায় রোগী সহ যাত্রীরা৷ বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল দিনের পর দিন বাড়ছে৷ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের লাগাম দাম ছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এমনি আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ গত ৭-৮ দিনে জিনিসপত্র দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷ আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ফল, সবজি ইত্যাদি জিনিসের দাম দিনে দিনে বাড়ছে৷ কৈলাসহর বাজারে ঐ সব জিনিস অনেক কম মজুত রয়েছে৷ খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাচে তেমন জিনিস মজুত নেই তা দেখা গেছে৷ বড় ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ মাস দেড়েক ধরে আটকে থাকা গাড়ির মধ্যে অনেক জিনিস অকেজো হয়ে গেছে তা চোখে দেখা গেছে৷ গতকাল আসামের লোয়ারপোয়ায় এক লরি চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক-দেড় মাস ধরে কয়েক হাজার লরি আটকে পড়েছে৷ রাস্তায় দিবারাত্রি কাটাচ্ছে লরি চালকরা৷ অনেক চালক অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ কয়েক মাইল এলাকার মধ্যে কোন খাবার জিনিস নেই৷ প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে কোন জায়গায় দাঁড়ানোর মতো নেই৷ লরি রেখে কোন জায়গায় যাওয়াও যায় না কারণ লক্ষ লক্ষ টাকার মালপত্র গাড়ির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে৷ রয়েছে চোরের উপদ্রব৷ এছাড়া অন্য কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয়ত ঘটে যাবে সে ভাবে লরির চালকরা লরি রেখে দূরে যেতে পারছে না৷ খুবই কষ্টের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার লরির চালক দিন কাটাচ্ছে রাস্তার পাশে৷ জানা যায় প্রায় ৫ হাজারের উপর লরি আটকে পড়েছে৷ গত শুখা মরশুম থেকেই ধূলোবালি কারণে লরি সহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয়েছে৷ রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়েছে তা কিন্তু বর্ষার পূর্বে হয়েছে৷ কেন্দ্র ও আসাম সরকার আগাম কোন পদক্ষেপ যদি নেয় তাহলে এই সমস্যা হত না৷ আর ত্রিপুরাবাসী আজ এই দুর্যোগের শিকার হত না৷ কুকিতল কাঁঠালতলী হয়ে বিকল্প যে রাস্তা সে রাস্তা দিয়ে কিছু কিছু মালপত্র ত্রিপুরায় এসেছিল সে রাস্তা গত কয়েকদিন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ সম্ভবত আজকালের মধ্যেই সে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে৷
এই প্রতিবেদক আজ এই রাস্তার অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসেছে৷ ত্রিপুরার হাজার হাজার রোগী, শিলচর ও মাকুন্দার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নেন কারণ ত্রিপুরার চিকিৎসার উপরে অনেকের আস্থা নেই৷ যার ফলে আসামে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নেন৷ ঐসব রোগীরা আজ রাস্তার কারণে বিপাকে পড়েছে৷ জাতীয় সড়ক উন্নত করার জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছে৷ কিন্তু কোন সরকার সময় মতো পদক্ষেপ নেন নি যার ফলে এই দুর্ভোগ জানা গেছে রাস্তায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে এক গর্ভবর্তী মহিলা প্রসব হয়েছে আশপাশে কোন বাড়িঘর নেই৷ জলের জন্য অনেক হাহাকার করতে হয়েছে ঐ মহিলার সঙ্গে থাকা নিকট আত্মীয়দের৷ আগে পিছে অনেক গাড়ি থাকার কারণে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি৷ অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় আটকে এই ধরনের সমস্যা ঘটছে তা গতকাল সরেজমিনে গিয়ে খবর পাওয়া যায়৷ এদিকে চুড়াইবাড়ি থেকে প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের অবস্থা বিপদজ্জনক করে ঠিক হবে তা বলা মুশকিল৷ কুকিতল হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কিছু মালপত্র ও পেট্রোল রাজ্যে গত কয়েক দিনে ঢুকলেও আজ থেকে ঐ রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে৷ ঐ রাস্তা দিয়ে আর যানবাহন চলাল সম্ভব হবে না বিপজ্জনক অবস্থা দাড়িয়েছে৷ সব মিলিয়ে ত্রিপুরার জনসাধারণ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বেশি দাম দিয়েও পাবে না কারণ জিনিস রাজ্যে আসলে তা ব্যবসায়ীরা বাজারে নিয়ে আসবেন৷ তা আর হয়ত কবে স্বাভাবিক হবে এটা বলা যাচ্ছে না৷ রাজ্যে সরকার রাজ্যবাসীকে বাঁচাতে জিনিসপত্রের জন্য হেলিকপ্ঢার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে৷ এর মূল কারণ হল রাস্তায় আটকে থাকা হাজার হাজার লরির মাল তো আর ট্রেনে আনতে পারবে না৷ নতুন করে ট্রেন দিয়ে ব্যবসায়ীরা মাল যদি আনতে পারেন তবেই ত্রিপুরায় মানুষ খাবার জিনিস পেতে পারে৷ তবে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে৷ দীর্ঘদিন আটকে থাকার জন্য লরির মধ্যে রোদে বৃষ্টিতেই অনেক মালপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ সে ক্ষতির দায় কে নেবে৷ কারণ রাজ্যবাসী জাতীয় সড়ক উন্নত করার জন্য অনেক বছর পূর্বে থেকে দাবি করে আসছে৷ রাজ্যে সরকার যদি দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তবে ত্রিপুরাবাসী কিছুদিনের মধ্যেই বড় ধরনের দুর্ভোগে পড়ে যাবে৷