বারাণসীতে সবুজায়নের পথে আরো এক কদম
।। সন্দীপ বিশ্বাস।।
বারাণসী সফররত, ১৪ জানুয়ারি : পরিবেশ দূষণের প্রভাব হ্রাস করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগে ফলস্বরূপ বিশ্বের প্রথম ভাসমান সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) স্টেশন সফলভাবে বারাণসীর নমো ঘাটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বারাণসীতে গঙ্গা নদীতে ভ্রমণকালীন সময়ে নৌকা থেকে নির্গত ধোঁয়া দেখে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা প্রস্তাব থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
বারাণসীস্থিত গেইল-এর জেনারেল ম্যানেজার সুশীল কুমার ত্রিপুরার একদল সাংবাদিক এবং চিত্র-সাংবাদিকদের সাথে এই উদ্ভাবনী সিএনজি স্টেশনের বিশদ বিবরণ ভাগ করেছেন৷ কুমার বিবরণ দিয়ে বলেন, এই উদ্যোগের পিছনে অনুপ্রেরণা এসেছিল যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উভয়েই নমো ঘাটের কাছে গঙ্গা নদীর তীরে ক্ষতিকারক কালো ধোঁয়া নির্গত ডিজেল ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
তাঁদের প্রস্তাবে নমো ঘাটে একটি সিএনজি স্টেশন স্থাপন এবং নৌকায় ডিজেল ইঞ্জিনকে সিএনজি ইঞ্জিনে রূপান্তর করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে মোতাবেক পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক (MoP) সিএনজি স্টেশন নির্মাণের আদেশ জারি করেছে এবং বারাণসীস্থিত গেইল-কে ভাসমান সিএনজি স্টেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র প্রদান করেছে।
তাঁর কথায়, প্রায় ১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগে গেইল সফলভাবে নমো ঘাটে বিশ্বের প্রথম ভাসমান সিএনজি স্টেশন এবং ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রবিদাস ঘাটে দ্বিতীয়টি সফলভাবে স্থাপন করেছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯ মাস সময় নিয়েছে এবং স্টেশনটিতে ৫০০০ কেজি সিএনজি রাখার ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর দাবি, মোবাইল রিফিলিং ইউনিটের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ সহ গেইল ২০২১ সাল থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮০০টি নৌকায় সিএনজি বিক্রি শুরু করেছে।
এদিন সুশীল কুমার গেইল-র কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (CSR) তহবিল থেকে ১৪ কোটি টাকা অর্থায়নে ডিজেল-চালিত নৌকাগুলিকে গ্যাস-চালিত নৌকায় রূপান্তর করার জন্য সংস্থার উদ্যোগের বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, আনুমানিক ৭৮০টি নৌযান ডিজেল থেকে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন আরো ১৮০টি রয়েছে। বারাণসী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নৌকা শনাক্ত করেছে এবং প্রতি নৌকায় রূপান্তরের জন্য প্রায় ১.৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
সিএনজি-এর সাশ্রয়ী-কার্যকারিতা তুলে ধরে, কুমার বলেন, প্রতি কেজি সিএনজি-র মূল্য ৮৩.৬৭ টাকা, তাতে প্রতি কেজিতে ২০ শতাংশ নৌ-চালকদের লাভ হচ্ছে। তাঁর দাবি, দুটি ভাসমান সিএনজি স্টেশন বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৮০০ কেজি গ্যাস বিক্রি করছে এবং গঙ্গা নদীর তীরে আরও তিনটি ভাসমান সিএনজি স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তাঁর কথায়, বারাণসীতে বর্তমানে ২৬টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে, যার মধ্যে ভাসমান সিএনজি স্টেশন। সব মিলিয়ে প্রতিদিন মোট ৭০,০০০ কেজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। ভাসমান সিএনজি স্টেশনগুলির প্রবর্তন এই অঞ্চলে পরিচ্ছন্ন এবং আরও টেকসই পরিবহনের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, জোর গলায় দাবি করেন তিনি।

