তেজপুর (অসম), ৩১ ডিসেম্বর (হি.স.) : ভারতকে একটি কৌশলগত অর্থনীতিতে পরিণত করতে সরকার মজবুত দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত তৈরি করছে, তেজপুরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, নতুন ভারত আর ‘হতে দাও, চলতে দাও’ মানসিকতায় বিশ্বাস করে না। নতুন ভারত বলে, ‘চলো এটা করে ফেলি’, এই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে কাজ চলছে দেশে। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাঁর মন্ত্রক সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা অর্জনের জন্য মন্ত্রকের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে রাজনাথ সিং জোরের সঙ্গে বলেন, প্রথমবারের মতো বর্তমান সরকারের আমলে বহির্দেশ থেকে অস্ত্র আমদানিতে রাশ টানা হয়েছে।
বলেন, ‘আমরা পাঁচটি ইতিবাচক স্বদেশীকরণের তালিকা জারি করেছি, যার অধীনে ৫০৯টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলির উৎপাদন এখন দেশীয়ভাবে করা হবে। এছাড়া আমরা প্রতিরক্ষা পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং-এর চারটি ইতিবাচক স্বদেশীকরণ তালিকাও জারি করেছি, যার মধ্যে ৪,৬৬৬টি আইটেমকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এগুলিও আমাদের দেশে তৈরি করা হবে।’
দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ওপর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো উৎপাদন পরিসংখ্যান এক লক্ষ কোটি টাকার রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ২০১৬-১৭ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা রফতনির মোট মূল্য ছিল ১,৫২১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে ১৫,৯২০ কোটি টাকার রেকর্ড স্তরে পৌঁছে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, বলেন তিনি।
প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে রাজনাথ সিং বলেন, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্তমান সরকার সক্রিয়। বিশদে বর্ণনা করে বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটকে আস্থার সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেন, সরকার সামরিক বাহিনী সহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আজ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছেন। যুদ্ধবিমান থেকে চন্দ্রযান, এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে নারীদের উপস্থিতি দেখা যায় না।
দেশকে বিকশিত ভারত হিসেবে গড়তে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারতকে একটি অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি বানানোর বিষয় মেধাবী যুবকদের ক্ষমতা ও আস্থার ওপর নির্ভর করে। তাই তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সরকার স্টার্ট-আপ সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমকে উন্নীত করেছে, যোগ করেন তিনি।
প্রতিরক্ষা শিল্প খাতে মন্ত্রক কর্তৃক সূচিত স্টার্ট-আপ সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স তার সূচনা থেকে সফলভাবে উদ্ভাবনী ধারণা প্রচার করছে। তিনি বলেন, যুবাদের উদ্যোগী তৈরির জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যার জন্য দেশে আজ এক লক্ষেরও বেশি স্টার্ট-আপ রয়েছে, বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, তেজপুরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। নির্ধারিত পাঠ্যক্রম সফলভাবে সম্পন্নকারী ১,৩৫৫ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা প্রদান করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছাড়াও তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শম্ভুনাথ সিং, গজরাজ কোরের কর্পস কমান্ডার এবং বেশ কয়েকজন অসামরিক ও সামরিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সেনাকর্মীদের চিনা ভাষায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পরিষেবা প্রসারিত করছে। গত এপ্রিল মাসে একটি বেসিক চিনা ভাষার কোর্স অফার করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ কর্পস-এর হেডকোয়ার্টারে সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কোর্সটি একটি মধ্যবর্তী স্তরে শোনা, কথা বলা, পড়া এবং লেখার দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

