নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জুন৷৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ছাত্রছাত্রীদের খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার পর্ষদ পরিচালিত দ্বাদশের ফলাফলে এবছরও কমেছে পাশের হার৷ তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ণ উঠেছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে৷ অবশ্য কাঠগড়ায় রয়েছে দেশের শিক্ষানীতিও৷ প্রথমত, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল প্রথা উঠে যাওয়ার কারণে ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিকে এবং দ্বাদশে বিরাট সমস্যার মুখে পড়ে বলে দাবী অভিভাবক মহলের৷ তবে, এই সমস্যার পিছনে রাজ্যের সুকলগুলির শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ বিশেষ করে ভাবাচ্ছে এবছর দ্বাদশে অংকের ফলাফল৷ যেখানে ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে অংকে৷ যুক্তিবাদী মহলের বক্তব্য অনুসারে অংক মূলত ছাত্রছাত্রীদের কষতে হয়৷ নোট দিয়ে এই বিষয়টিতে পাশ করা সম্ভব নয়৷ যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম মান পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে পাশ করে যাচ্ছে সেখানে বিশেষ করে অংকে দূর্বল হওয়ায় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে, এখানেও শিক্ষক শিক্ষিকারা দায়িত্ব নিয়ে অষ্টম মান পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের অংকের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ যুক্তিবাদী মহলের দাবি, অষ্টম মান পর্যন্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্বলতা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ফল খারাপের পিছনে অন্যতম মুখ্য কারণ৷
দেশের শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে ঠিকই৷ তবে, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে যে সুনির্দিষ্ট মানদন্ড রাখা হয়েছে তা শিক্ষক শিক্ষিকারাই মেনে চলছেন না৷ স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরাও গুনগত শিক্ষায় পটু হতে পারছেনা৷ ফলে, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ঐসব ছাত্রছাত্রীদের খারাপ অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে করছেন অভিভাবক মহল৷ অবশ্য, অভিযোগ এও রয়েছে পাশফেল প্রথা তুলে দেওয়ার কারণে অষ্টম মান পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা এর দুর্ব্যবহার করছে৷ লক্ষ্য যেখানে ছিল, সকলকে শিক্ষিত করে তোলা, সেখানে দেশের এই শিক্ষানীতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের বিরাট অংশ শিক্ষায় দুর্বলই থেকে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের দায়িত্ব পালনের আওয়াজ উঠেছে৷
এরাজ্যের চিত্রটা আরও করুণ৷ শহর এলাকায় যেসমস্ত সুকল রয়েছে সেখানে শিক্ষক শিক্ষিকারা বাধ্য হয়ে হলেও প্রতিনিয়ত সুকলে হাজিরা দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন৷ তবে, মফঃস্বলে এই পরিস্থিতি মারাত্মক বিপর্য্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ শিক্ষা দপ্তরের অধিকাংশ কর্তাদের মতে মফঃস্বলে বহু সুকল রয়েছে যেখানে প্রক্সি টিচাররা ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন৷ সরকারী শিক্ষকদের গুনমান নিয়েই এরাজ্যে প্রতিনিয়িত সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে৷ সেখানে মফঃস্বলে প্রক্সি টিচারদের হাতে ছাত্রছাত্রীদের কি হাল হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়৷ চিন্তার কারণ আগামীদিনে আরও বাড়বে, কারণ প্রতিবছর বহু সরকারী শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন৷ অথচ টেট ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ এখন সম্ভব নয়৷ টেট এর মাধ্যমে শিক্ষক পাওয়াও দুঃস্কর হয়ে গিয়েছে৷ ফলে, আগামীদিনে রাজ্যের সুকলগুলির হাল কী হবে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলেই মনে করছে যুক্তিবাদী মহল৷ এই মহলের দাবি, রাজ্য সরকারকে এখন আন্তরিকতার সাথে শিক্ষাক্ষেত্রে আগামীদিনের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে৷
2016-06-10

