নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ মে৷৷ কৃতিত্ব দেখাতে গিয়ে রাজ্যের দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের চরম বিড়ম্বনার মুখে ঠেলে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ শনিবার বিজ্ঞান বিভাগের ফল প্রকাশিত করা হলেও মার্কশীট হাতে পেতে তাদের সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ এদিকে, এনসিইআরটি’র নিয়ম নীতির যুক্তি দেখিয়ে দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম কে হয়েছেন তা জানায়নি পর্ষদ৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেব জানিয়েছেন, এনসিইআরটির নিয়ম অনুসারে কেবলমাত্র পরীক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়া হবে৷ সেক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় এবার থেকে এসব কিছুই থাকছে না৷ কিন্তু, এদিন পর্ষদ কোন্ কোন্ গ্রেডে কত সংখ্যক পরীক্ষার্থী রয়েছেন তাও জানাতে ব্যর্থ হয়েছে৷ পর্ষদ সভাপতির বক্তব্য সময়ের অভাবে এখনই কোন্ কোন্ গ্রেডে কত পরীক্ষার্থী তা জানানো সম্ভব হচ্ছে না৷ এদিকে, মার্কশীট পেতে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে পরীক্ষার্থীদের৷ এদিন পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় স্তরের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে যাতে দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ফল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘোষণা দেওয়া যায়৷ সেই মোতাবেক আজ ফল প্রকাশ করা হয়েছে৷ কিন্তু, যেহেতু আজ শনিবার বুদ্ধপূর্ণিমা এবং আগামীকাল রবিবার এই দুই দিন সরকারী ছুটি তার জন্য মার্কশীট রাজ্যের সমস্ত সুকলগুলিতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ আগামী সোমবার প্রত্যেক সুকলে পরীক্ষার্থীরা মার্কশীট পেয়ে যাবে বলে জানান তিনি৷ আর তাতেই পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক মহলও ক্ষোভে ফঁুসছেন৷ তাদের বক্তব্য, প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ার শুরুর সাথে সাথেই সরকারী অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সরকারী ছুটির দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে থাকে৷ পাশাপাশি কোন্ কোন্ তারিখে রবিবার রয়েছে তাও নির্দিষ্টভাবে জানা যায়৷ অথচ আজ শনিবার বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এবং আগামীকাল রবিবার এই দুইদিন সরকারী সুকলগুলিতে ছুটি থাকবে, সে কথা আগেই জানা ছিল পর্ষদের৷ তা সত্বেও শনিবারই দ্বাদশে বিজ্ঞান বিভাগের ফল প্রকাশ করার এমন কি বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল তা নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠার পাশাপাশি ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে৷
এনসিইআরটির গাইড লাইন মেনেই সিবিএসই আজ দ্বাদশের ফলাফল ঘোষণা দিয়েছে৷ সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনকারীদের নাম ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু, ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোন শীর্ষ স্থানাধিকারীর নাম ঘোষণা করা হবে না এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে৷ একাংশের মতে কৃতিত্ব দেখাতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষ স্থানাধিকারীদের চিহ্ণিত করা সম্ভব হয়নি পর্ষদের৷ অবশ্য এই যুক্তি অনেকটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ কারণ, গ্রেড এএ, গ্রেড এ প্লাস, গ্রেড এ, গ্রেড বি প্লাস, গ্রেড বি, গ্রেড সি এবং গ্রেড ডি-তে কত সংখ্যক পরীক্ষার্থী রয়েছেন তা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে পর্ষদ৷ কলা বিভাগ এবং বাণিজ্য বিভাগের ফলাফল ঘোষণার দিন সমস্ত কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে বলে এদিন পর্ষদ সভাপতি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন৷
উল্লেখ্য, এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হাত ৮১.৪১ শতাংশ৷ নিয়মিত পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে ছিল ৩,৩১৯ জন৷ পাশ করেছে ২,৭০২ জন৷ রেগুলা৩র, কন্টিনিউইং, এক্ট্রান্যাল, সাপ্লিমেন্টারী মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩,৬০৯ জন৷ এর মধ্যে পরীক্ষায় বসেছে ৩,৫৯৩ জন৷ এবছর রেগুলার পরীক্ষার্থীর নতুন সিলেবাস এবং বাকীরা পুরনো সিলেবাস পরীক্ষা দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে পাশ করেছে ২,৮৭৬ জন৷
পর্ষদ সভাপতি জানান, রেগুলার পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোন ডিভিশান থাকছেনা৷ এর পরিবর্তে গ্রেড দেখানো হয়েছে৷ তিনি জানান, গ্রেডের ক্ষেত্রে ৯০-১০০ নম্বর পর্যন্ত গ্রেড এএ, ৮০-৮৯ নম্বর পর্যন্ত গ্রেড এ প্লাস, ৬০-৭৯ নম্বর পর্যন্ত গ্রেড এ, ৫০-৫৯ নম্বর পর্যন্ত গ্রেড বি প্লাস, ৩৬ থেকে ৪৯ গ্রেড বি এবং ৩০-৩৫ গ্রেড সি৷ ৩০ এর নিচে হলে হবে গ্রেড ডি মানে অসফল বা অনুত্তীর্ন হিসেবে গণ্য হবে৷
উল্লেখ্য, পুরনো সিলেবাসে এই বিভাগের যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডিভিশান বহাল রয়েছে৷ পুরনো সিলেবাস কন্টিনিউইং পরীক্ষার্থী ছিল ২১৪ জন৷ পরীক্ষায় বসেছিল ১৯৮ জন৷ এর মধ্যে প্রথম বিভাগে ৭ জন, দ্বিতীয় বিভাগে ৫২ জন এবং তৃতীয় বিভাগে ৬৮ জন৷ মোট ১২৭ জন পরীক্ষার্থী পাশ করেছে৷ পাশের হার ৬৪১৪ শতাংশ৷ পর্ষদ সভাপতি জানান, আগামী ২৩ মে থেকে পরীর্ক্ষাথীর মার্কশীট পাবে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে৷ পরীক্ষার খাতা রিভিউ করা হবে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে৷ পরীক্ষার্থীরা যে কোন বিষয়ে রিভিউ করতে হলে ২৩ মে থেকে ২৮ মে এর মধ্যে নিজ নিজ সুকল থেকে পর্ষদের কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে৷ তিনি আরো জানান, এবছরে যারা একটি বিষয়ে ফেল করেছে, তারা সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষায় বসতে পারবে৷ উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার সব বিভাগের সম্পূর্ণ ফল প্রকাশের ৬০ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা পর্ব সম্পন্ন করা হবে৷ রাজ্যের ৮টি জেলার প্রতিটি জেলাতে একটি পরীক্ষা সেন্টারেই এই পরীক্ষা নেয়া হবে৷ এই পরীক্ষায় পাশ করলে তা মার্কশীট যুক্ত করে দেয়া হবে৷ অন্যদিকে যারা কম্পার্টমেন্টাল পেয়েছে তাদেরকে আগামী বছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষায় বসতে হবে বলে পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষা গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয় এবং গত ৯ এপ্রিল পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হয়৷ উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার বিজ্ঞান বিভাগের ফল প্রকাশের সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সচিব ড স্বপন কুমার পোদ্দার সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷
2016-05-22

