নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ এপ্রিল৷৷ স্বাবলম্বন প্রকল্পে স্ব-সহায়ক দলগুলির প্রতি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ব্যাঙ্কগুলিকে আরো আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের স্বাবলম্বন প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর করতে, স্বসহায়ক দলগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পস্থানে উৎসাহিত করতে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন রাজ্য সরকার৷ আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে বলা হয়েছিল স্বাবলম্বন প্রকল্পে ভর্তুকি বাড়ানো হবে৷ রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে স্বসহায়ক দলগুলিকে যে ঋণ দেওয়া হয় তার সুদের হার কমানো হবে৷ রাজ্যে শিল্প স্থাপনে এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ ইনসেনটিভ দেওয়া হবে৷ পেনশন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা বাড়ানো এবং রেশন ভোক্তাদের ভর্তুকি বাড়ানো হবে৷ তিনি জানান, ২০০১ সাল থেকে রাজ্যে স্বাবলম্বন প্রকল্প চালু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার ১২ হাজার ৬৭৭ জনকে ২০৬ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে৷ তারা নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি অনেকে তাদের ব্যবসায় দুই একজন লোকও নিয়োগ করেছেন৷ আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভর্তুকির পরিমাণ ৬৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে পুরুষরা ৩০ শতাংশ এবং মহিলারা ৩৫ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন৷ এবছর ১লা এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ শিল্প বাণিজ্য দপ্তর এবছর ৪ হাজার জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলো তাদের কাজের ভিত্তিতে প্রথম গ্রেডেশন, দ্বিতীয় গ্রেডেশন পাওয়ার পর ব্যাঙ্কের কাছে টাকা চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা টাকা পাচ্ছে না৷ তাতে তারা কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে৷ এই অবস্থায় রাজ্য সরকার ২০১৪-১৫ সালে স্টেট কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে এবং রাজ্য সরকার ও ব্যাঙ্ক মিলে একটি তহবিল গঠন করে স্বসহায়ক ঋণ দেওয়ার জন্য৷ বর্তমানে তা এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে প্রতিটি এসএইচ জির জন্য৷ এজন্য রাজ্য সরকার ৫০ হাজার এবং ব্যাঙ্ক ৫০ হাজার টাকা দেবে৷ এখন পর্যন্ত ৮ হ াজার ৩২৭টি স্বসহায়ক দল ঋণ নিয়েছে এবং তারা স্বাবলম্বী হয়ে ঋণের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছে৷ রাজ্য সরকার তাদের ৪ শতাংশ হারে ঋণ দিত৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাদের আরো উৎসাহিত করতে সুদের হার চার শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন শতাংশ করা হয়েছে৷ তবে ব্যাঙ্ক তার নিয়ম অনুযায়ী সুদ ঠিক করবে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন এই সিদ্ধান্তের বেকাররা উৎসাহিত হবেন৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের নিজস্ব কাঁচামাল যেমন বাঁশ, রাবার, গ্যাস কৃষি ও উদ্যানজাত পণ্যের উপর ভিত্তি করে শিল্প স্থাপন করলে উদ্যোগীদের ভর্তুকি ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে ভর্তুকির সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৬০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ আজ মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে ২০ এবং ২০ জনের বেশি কাজ করে এমন স্কিল্ড এবং সেমি স্কিল্ড শ্রমিকদের এমপ্লয়িজ স্টেট ইনস্যুরেন্স এবং এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাঁচ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকার রিএমভার্স করবে৷ ৫০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে এমন বড় শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ই এম আই এবং ই পি এস -এর ৫০ শতাংশ টাকা পাঁচ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকার রিএমভার্স করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্য সরকারের ২৪টি পেনশন প্রকল্প চালু আছে৷ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে৷ তাই এক হাজার টাকার কম যারা পেনশন পাচ্ছেন তাদের পেনশন ১০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে৷ এতে সব মিলিয়ে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৭১৪ জন উপকৃত হবেন এবং বছরে রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৩৮ কোটি টাকা৷ বর্তমানে বছরে ১৩১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে৷ রাজ্যে যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং বছরে আয় দেড় লক্ষ টাকার কম তাদের মাসে ৬০০ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে৷ এটা নতুন প্রকল্প৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রেশন ভোক্তাদের রেশনকার্ড পিছু ভোজ্য তেল, মশুর ডালে প্রতি মাসে ৩৫ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ তিন মাস অন্তর অন্তর তা ভোক্তার ব্যাঙ্ক একাউন্টে পাঠানো হচ্ছে৷ আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভর্তুকির পরিমাণ আরো ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে৷ এখন থেকে ভোক্তারা ৫০ টাকা ভর্তুকি পাবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ মন্ত্রিসভার সব সিদ্ধান্ত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হবে৷ তিনি বলেছে—, রাজ্য সরকার যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা রক্ষা করে৷ রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত ৷ সাংবাদিকদের প্রশ্ণের উত্তরে তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে রাজ্য সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে ত্রুটি থাকতেই পারে৷ তা দূর করার জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
2016-04-27
