দুর্গাপুর, ২৮ ডিসেম্বর (হি. স.) : পিকনিকে গিয়ে অজয় নদীতে স্নান করতে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হল ছাত্রের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে, অজয় নদের ইলামাবাজার থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃতের নাম সন্দিপ বারুই(১৭), দুর্গাপুরের বেনাচিতির বিদ্যাসাগরপল্লীর বাসীন্দা। একাদশ শ্রেনীর ছাত্র সে। বুধবার সকালে গৃহ শিক্ষকের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়েছিল কাঁকসার দেউল পার্কে। সেখানেই অজয় নদের মাঝামাঝি এলাকায় জলে স্নান করতে নামে সন্দীপ সহ তার দুই বন্ধু। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। হঠাৎই জলে তলিয়ে যায় সন্দীপ। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও তা ব্যার্থ হয়।
এরপরই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় ইলামবাজার থানার পুলিশ। স্থানীয়দের তৎপরতায় বেশ কিছুক্ষন পর উদ্ধার হয় সন্দীপের মৃতদেহ। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। পিকনিক করতে আসা সন্দীপের অনান্য বন্ধুরা জানায়, “সকলের নজর এড়িয়ে এদিন জলে নামে তারা। আর সাঁতার না জানার কারনেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। বিনোদনে যে এই ভাবে বিপদ ডেকে আনবে, তা ভাবতেও পারেন নি কেউ। নিমেষের মধ্যেই আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে, সন্দীপের মৃত্যুতে শোকাহত পরিবার সহ প্রতিবেশীরা।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই স্নান করতে নেমে অজয় নদে তলিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয় কাঁকসার সাতকাহানিয়া নারকেলবাগান ঘাটে। মৃতের নাম সৈয়দ আব্দুল আজিম (১৮) বীরভুমের ইলামবাজার থানার সুখবাজারের বাসিন্দা। অভিযোগ ওঠে মেশিন দ্বারা বালি উত্তোলনের দিকে। দুষছে এলাকাবাসী।
২০১৯ সালের ৫ মে সাতকাহানিয়ার বাঁশতলা ঘাটে স্নান করতে নেমে শেখ সামসুল(১৫) অযোধ্যা স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্রের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারী অজয় নদীতে মকর স্নান করতে গিয়ে কাঁকসার সাতকাহানিয়ায় ঘাটে লাল রুইদাস(৩২) এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল লাউদোহার গৌরবাজার এলাকায় অজয় নদীতে স্নান করতে নেমে জলে তলিয়ে মৃত্য হয় কিশোর মন্ডল(১২) এক যুবকের। ২০২১ সালের ১৮ মে দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের লাউদোহার পানশিউলি এলাকায় অজয় নদী ঘাটে অনিমেষ মন্ডল(১৮) এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
প্রশ্ন, অজয় নদীতে জলের এই গভিরতার কারন কি? অভিযোগ, গ্রীন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে মেশিন বসিয়ে অবাধে চলে বালি উত্তোলন। নদীতে পাম্প বসিয়ে জলমিশ্রিত বালি তোলা হয়। জলবালি মিশ্রিত বিশেষ ছাকনির সাহায্যে বালি আলাদা করা হয় নদীতে। তারপর ওই বালি জেসিবি দিয়ে লরিতে ভর্তি হয়ে পাচার হয় শহরে। আর পাম্প বসিয়ে বালি তোলার ফলে নদীতে অচিরে খাদ তৈরী হয়। যদিও পাম্প বসিয়ে কিম্বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালি উত্তোলনে গ্রীনট্রাইবুনালের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও রমরমিয়ে চলে পাম্প বসিয়ে বালি উত্তোলন। বেশ কিছু বৈধঘাটের পাশে অবাধে চলছে অবৈধঘাট। পরপর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, নদীতে অবৈধ বালিঘাটের নজরদারিতে। অভিযোগ, অবৈধ বালি তোলার ফলে ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। বদলে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে নদীতে গভীর খাদ তৈরী হয়েছে। নদী জলপুর্ন হওয়ায় ওই খাদ টের করতে পারে না অনেকে। যার ফলে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের দাবী,” প্রশাসনের কাছে আবেদন, নদীতে এধরনের মেশিন দিয়ে বালি তোলা বন্ধ হোক। কড়া নজরদারির আবেদন রাখছি। পাশাপাশি নদীতে হড়পা বান কিম্বা আচমকা নদীতে জলস্রোত আসার খবর থাকলে এলাকায় সতর্ক করে দেওয়ারও আবেদন রাখছি।” ইলামবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে,” ঘটনার তদন্ত চলছে।”

