কলকাতা, নয়াদিল্লী, ৩১ জানুয়ারী৷৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট শিয়রে৷ এই ভোটে কি বামেদের হাত ধরবে কংগ্রেস৷ এর উত্তর মিলবে সোমবার৷ ঐদিন ইন্দ্রপ্রস্থে দলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈছক করবেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের জোটপন্থী নেতারা৷ বামেদের সাথে গেলে কী লাভ, রাহুলকে তা বোঝাতে রীতিমতো তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে তৈরী পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷
এদিকে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে সিপিএমের ডাকে সাড়া দেবে কংগ্রেস? গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে দলের হাইকমান্ডের উপর৷ সোমবার দিল্লীতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের বৈঠক৷ বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতি কোন পথে যাবে তা এই বৈঠকেই ঠিক হয়ে যেতে পারে৷ বৈঠকে থাকছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ থাকছেন লোকসভার তিন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী, মৌসম বেনজির নূর, অভিজিত মুখার্জী৷ প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, মানস ভঁূইয়াকেও টাকা হয়েছে বৈঠকে৷ দীপা দাশমুন্সি, আব্দুল মান্নান, ওমপ্রকাশ মিশ্র, মহম্মদ সোহরাব, অমিতাভ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জন রায়ের মতো প্রদেশ কংগ্রেস নেতারও রাহুলের মুখোমুখ হচ্ছেন৷
বিধান ভবন সূত্রে খবর, নেতাদের অধিকাংশই কংগ্রেস সহ সভাপতির কাছে বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করবেন৷ একলা চলোর পক্ষেও মত দিতে পারেন কয়েকজন৷ কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে মুখ খোলার মতো বিশেষ কেউ নাই৷ কংগ্রেস সূত্রে খবর, অধীর চৌধুরী, আবু হাসেম খান চৌধুরী, মৌসম বেনজির নুর, অভিজিত মুখার্জী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, আব্দুল মান্নান, ওমপ্রকাশ মিশ্র, মহম্মদ সোহরাব, অমিতাভ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জন রায়রা রাহুল গান্ধীর কাছে বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষেই মুখ খুলবেন৷
রাজ্যে একলা চলুক বলতে পারেন মানস ভঁূইয়া, অভিজিত মুখার্জী৷ রাহুলের কাছে দীপা দাশমুন্সি কী বলবেন তা এখনও পরিস্কার নয়৷ জোটের পক্ষে সওয়াল তো হল৷ কিন্তু, আসন ভাগভাগি নিয়ে কি হবে৷ এনিয়ে চলছে জোর জল্পনা কল্পনা৷ রীতিমতো হোমওয়ার্ক করেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা৷ গত বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তালিকা তৈরি করে ফেলেছেন অধীনর অনুগামীরা৷
প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, বামেদের সঙ্গে জোট হলে রাহুলকে একশ দুটি আসলে লড়াইযের প্রস্তাব দেবেন অধীররা৷ দাবি জানাবেন দর কষাকষিতে তা যেন কখনই নববইয়ের কম না হয়৷ এই আসনগুলির মধ্যে অন্তত পঁচাত্তরটি আসনে কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন তাঁরা৷ উত্তরবঙ্গের সাত জেলা ও মুর্শিদাবাদেই সবচেয়ে বেশি আসনের প্রস্তাব দেবেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা৷ প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের অধিকাংশেরই দাবি, বামেদের সঙ্গে তাদের জোট হলে উত্তরবঙ্গে কার্যত নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে তৃণমূল৷ সব জেলাতেই দুই থেকে চার আসন৷ কলকতায় বেলেখাটা ও জোড়াসাঁকো৷ দোট হলে এই দাবি থেকে হাইকমান্ড যেন না সরে৷ এটাও রাহুলকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন অধীর চৌধুরীরা৷
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পরও কি অধীর চৌধুরীর এই আত্মবিশ্বাস থাকবে? উত্তর মিলতে আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা বাকি৷ প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, উত্তববঙ্গে একাধিক আসনে তাঁদের জয় নিশ্চিত৷ কিন্তু, বামেরা কোনও আসনেই জিতবেন, একথা বলার জায়গাই নেই৷ গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে মাত্র পঁয়ষট্টিটি আসন ছেড়েছিল তৃণমূল৷ এবার বামেদের সঙ্গে জোট চাইলেও সম্মানজনক আসন ভাগাভাগির পক্ষেই রাহুল গান্ধীর কাছে সওয়াল করতে চলেছেন অধীর চৌধুরী৷
এদিকে, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত নিয়ে শুধু বঙ্গেই নয় বামশাসিত ত্রিপুরাতেও রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে৷ ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট ক্ষমতায় রয়েছে৷ বামফ্রন্টের প্রধান বিরোধী হচ্ছে কংগ্রেস৷ ত্রিপুরায় কংগ্রেস নেতারা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের সাথে কোনওভাবেই যাতে কংগ্রেসের জোট না হয়৷ এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা সহ দলের অন্যান্য নেতারা হাইকমান্ডকে জানিয়ে দিয়েছে৷ এখন দেখার বিষয় হচ্ছে হাইকমান্ড বামেদের সাথে জোটে যায় কিনা৷
অন্যদিকে, সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিপিএমর প্লেনামে কংগ্রেসের সাথে জোটের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি৷ সেই প্লেনামের পরই কংগ্রেস-সিপিএমে জোট নিয়ে শুরু হয় জোর আলোচনা৷ দেশে সিপিএমের ভরাডুবি হচ্ছে একের পর এক নির্বাচনে৷ এই পরিস্থিতিতে সিপিএমকে তথা বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ৷ বঙ্গে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সিপিএম কংগ্রেসের সাথে জোটে যাওয়ার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যেই৷ তবে কংগ্রেসের তরফ থেকে জোটের ব্যাপারে কোন পাক্কা সিদ্ধান্ত জানানো হয়৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সোমবার দিল্লীতে বৈঠকে বসছেন বঙ্গের কংগ্রেস নেতারা৷
2016-02-01