শনিবার রাজ্য মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
গুয়াহাটি, ২৮ অক্টোবর (হি.স.) : অসমে আরেক নক্ষত্রের পতন হয়েছে। গতকাল অসমিয়া ছায়াছবির উজ্জ্বল নক্ষত্ৰ নিপন গোস্বামীর জীবনাবসান ঘটেছিল। অসমবাসী সেই শোক কেটে উঠতে পারেননি। আজ আরও এক নক্ষত্রের প্রয়াণ ঘটেছে। তিনি কিংবদন্তি চিত্ৰশিল্পী নীলপবন বরুয়া। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বিকাল ৩.১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন প্রথিতযশা চিত্ৰী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
বিশিষ্ট চিত্রীর মৃত্যপুতে শোকাহত রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল সহ রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়ক, সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শনিবার রাজ্য মর্যাদায় কিংবদন্তি চিত্রশিল্পীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
গত কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্ৰান্ত ছিলেন তিনি। ২২ সেপ্টেম্বর জ্বরের উপসর্গের উপসম না হওয়ায় এবং স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বিশিষ্ট চিত্রীকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল (জিএমসিএইচ)-এ ভরতি করা হয়েছিল। যথারীতি তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ক্ৰমশ স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। রাখা লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। অবশেষে আজ বিকালে মৃত্যুর কাছে হেরে গিয়েছেন চিত্ৰশিল্পী নীলপবন বরুয়া। বিশিষ্ট চিত্ৰী প্রয়াত হয়েছেন, এই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লে সমগ্ৰ রাজ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নীলপবন বরুয়ার পেইন্টিংগুলি বিমূর্ত। ওই সব পেইন্টিং মূর্ত ধারণা প্রকাশ করার জন্য অস্বাভাবিক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি অনেক অসমিয়া উপন্যাসের প্রচ্ছদ নকশা করে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর একেকটি চিত্র যেন কথা বলে।
আপার আসামের যোরহাট জেলার টিয়কে জন্মগ্রহণ করেন নীলপবন। প্রাথমিক ও কলেজ শিক্ষার পর তিনি চলে যান পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে চিত্রকলার শিক্ষা শেষ করে নীলপবন দিল্লিতে চিত্রকলার পাঠ গ্রহণ করেন।
২০১২ সালে নবকান্ত বরুয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নীলপবন বরুয়ার ৮৭টি চিত্রকর্মের একটি সংগ্রহ স্টেট আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়েছিল। শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০২১ সালে অসম সরকারের মর্যাদাপূর্ণ ‘অসম সৌরভ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
অসমের প্রখ্যাত গায়িকা দিপালী বরঠাকুরের সাথে নীলপবনের বিয়ে হয়েছিল। সুরেলা কণ্ঠের জন্য দিপালী ‘দ্য নাইটিঙ্গেল অব আসাম’ নামে পরিচিত ছিলেন। মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় শয্যাশায়ী ছিলেন দিপালী বরঠাকুর।
তিনি ছিলেন বিখ্যাত অসমিয়া লেখক বিনন্দচন্দ্র বরুয়ার ছেলে। তাঁর কবিতার বিনন্দচন্দ্র ‘ধ্বনি কবি’ নামে পরিচিত ছিলেন।