সেনহাটের মিত্রবাড়িতে পুজোর আচার থেকে বিসর্জনে সাবেকিয়ানা, পুরোনো রীতির চল

হুগলি, ৫ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : সোনালি দিন গিয়েছে। ঐতিহ্যের বয়স প্রায় ৫০১ বছর। আজও আভিজাত্যের অহঙ্কার অমলিন খানাকুলের সেনহাটের মিত্রবাড়িতে। পরিবারের সনাতন রীতি-নীতি মেনে আজও পালিত হয় দুর্গোৎসব।

যষ্ঠীর দিন কুলদেবতা ভগবান রঘুনাথ জিউয়ের অকাল রথের রশিতে টান দেন পরিবারের সদস্যরা।তারপর রথে করে দুর্গামন্দিরে আনা হয় প্রতিমা।পরিবারের সকল সদস্য মিলে অকাল বোধনে রথের রশিতে টান দেওয়ার পাশাপাশি জলঘড়ির ঐতিহ্যও অটুট রয়েছে।

প্রায় ৫০০ বছর আগে হাতঘড়ির প্রচলন ছিল না। একেবারে এই সব আধুনিক যন্ত্র তো কল্পনাতেও ছিল না। সময় দেখার একমাত্র ভরসা ছিল জলঘড়ি। মিত্রবাড়ির সদস্যদের দাবি, এই জলঘড়িটি উপহার হিসাবে মিত্রবাড়িতে এসেছিল বর্ধমানের রাজার কাছ থেকে। সেই জলঘড়ির সময় দেখেই আজও অনুষ্ঠিত হয় মিত্রবাড়ির দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজো।

আগে সন্ধ্যাপুজোর সময় মেষ বলি হতো। কামান দাগা হতো। এখন সে সব হয় না। সাবেককালে কেরোসিনের হ্যাজাকের বদলে আধুনিক আলো দিয়ে মণ্ডপ ও জমিদার বাড়ি সাজানো হয়। এখন আর সানাইয়ের সুর শোনা না গেলেও ঢাক ও কুড়কুড়ির বাজনা বাজে।

নবমীর দিন ১১টা পাঁঠা বলি হয়। দশমীর দিন রথে করে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর স্থায়ী মন্দিরে। দিন বদলালেও এই রীতির বদল ঘটেনি। বিজয়ার দিন বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। তারপর শোভাযাত্রা করে খানাকুলের রাজহাটি বাজারের বিশালক্ষ্মী মায়ের মন্দিরে মা দুর্গাকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দুই দেবতার সাক্ষাৎ হয়। সেখান থেকে বিসর্জন ঘাটে এনে বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে দুর্গা নাম লিখে বিসর্জন দেওয়া হয়।

আগে তালপাতায় লেখা হতো, এখন কাগজে দুর্গানাম লেখা হয়।সবমিলিয়ে সাবেকিয়ানা ও প্রাচীনত্বের নিরিখে সেন রাজাদের সমসাময়িক এই মিত্রবাড়ির দুর্গাপুজো। তাই বারোয়ারি পুজোর ভিড়ের মাঝেও সবসময়েই আলাদা জায়গা তৈরি করে নেয়।