আগরতলা, ২৪ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে শক্তির মহড়া দিল বিরোধী সিপিএম। ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কার্যত ঘরবন্দী ছিলেন সিপিএম কর্মীরা। আজ আগরতলার রাজপথ কাঁপিয়ে মিছিল এবং স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভায় কর্মীদের উপস্থিতি শাসক দল বিজেপির চিন্তা বাড়াবে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এদিন সিপিএম বিবেকানন্দ ময়দান পুরোটা কর্মী দিয়ে ভরতে ব্যর্থ হলেও হাজারে মানুষের ওই জনসভায় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে বামেদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে মনে করা উচিত হবে না। বরং, স্বত:স্ফুর্তভাবে ওই জনসভায় মানুষের অংশগ্রহণ শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিন জনসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে সিপিএম কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে।
আজকের জনসভায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত অংশ নিয়েছেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার, সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঘোর দেব্বর্মা। তাঁরা ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের নেতারা এদিনের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিন জনসভায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ত্রিপুরায় শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের টুটি টিপে হত্যার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে ২২ জন সিপিএম কর্মী খুন হয়েছেন। পার্টি অফিস ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। কোথাও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ভেবেছিল ভয়ভীতি দেখিয়ে বামেদের ঠেকিয়ে রাখবে। কিন্ত, তা কখনই সম্ভব হয়নি। তিনি শাসক দল বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ত্রিপুরায় অবাধ ও শান্তিপুর্ন নির্বাচন করে দেখান, রাজনৈতিক শক্তির পরীক্ষা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস বাদ দিয়ে ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিন। তাতেই সমস্ত কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।
বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস্তব সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোটেও চিন্তিত নন। তিনি কখনই সে-বিষয়ে কথা বলেন না। বরং, আরএসএস এবং বিজেপি বিভাজনের রাজনীতিতে মত্ত। তাঁরা হিজাব, হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ নিয়ে ব্যস্ত।
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত এদিন বলেন, দেশ এখন আর্থিক এবং রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা আওয়াজ তুলছেন তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে যাচ্ছে। এধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ হওয়া উচিত, বলেন তিনি।
এদিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বলেন, প্রতিরোধই নতুন ইতিহাস রচনার একমাত্র উপায়। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে, তাঁদের এখন উপযুক্ত জবাব দেওয়ার যোগ্য সময় হয়েছে। তাঁর দাবি, বিজেপি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থতার নজীর স্থাপন করেছে। শাসক দল ত্রিপুরার জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিজেপির অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করা আমাদের উচিত। তাঁর পরামর্শ, শাসক দল সম্পর্কে জনমত তৃণমূল স্তর থেকে সংগ্রহ করতে হবে। তবেই, বিজেপিকে মোকাবিলা করে জয়ী হওয়া সম্ভব হবে।