গুয়হাটি, ২১ জানুয়ারি (হি.স.) : ভারতীয় তথা হিন্দু সংস্কৃতি অতুলনীয়। প্রাচীন, সর্বশ্রেষ্ঠ হিন্দু সংস্কৃতিই গোটা বিশ্বকে দেখাতে পারে পথ। আমরাই হিন্দু সংস্কৃতির ধারক বাহক ও রক্ষক। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে হলে নারীশক্তিকে জাগ্রত, সংগঠিত ও সামর্থবান হতে হবে। বলেছেন রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির প্রমুখ সঞ্চালিকা (সর্বভারতীয় প্রধান) শান্তা আক্কা। আজ শুক্ৰবার স্থানীয় মাহেশ্বরী ভবনে রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির গুয়াহাটি মহানগর সমিতি আয়োজিত ‘মকর সংক্ৰান্তি কাৰ্যক্ৰম’-এ প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য পেশ করছিলেন সেবিকা সমিতির সর্বভারতীয় প্ৰমুখ সঞ্চালিকা শান্তা আক্কা।
মকর সংক্রান্তির তাৎপৰ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই দিনটি ভারতীয়রা কীভাবে পালন করেন তারও ব্যাখ্যা করেছেন সেবিকা-প্রধান আক্কা। বলেন, সংক্রান্তির অন্যতম বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে একে অপরের মধ্যে সুসম্পর্কের বন্ধন। এই তিথিতে দিন ও রাত যেমন সমান হয়, তেমনি দেহ ও মন গ্লানিমুক্ত হয়ে সারা ভারতের সর্বস্তরের মানুষ নিজেদের সমান মনে করেন। নিজেদের মধ্যে একাত্মতা অনুভব করেন। বৈচিত্র্যে ভরা দেশের অধিবাসী সমতার আদর্শে উজ্জীবিত হন। ফলে সমাজ মজবুত থেকে অতি-মজবুত এবং সংঘবব্ধ হয় এবং এটাই হিন্দু সংস্কৃতির বিশেষত্ব।
প্রসঙ্গক্রমে করোনার প্রথম ঢেউয়ে নাইজেরিয়ায় কোভিড-সংক্রমিত ঘরবন্দি এক আফ্রিকান পরিবারকে কীভাবে একই পাড়ার বাসিন্দা ১৫ এবং ১৭ বছরের দুই প্রবাসী ভারতীয় বালক সেবা-শুশ্রুষা করে, ওষুধ-পথ্য দিয়ে তাদের প্রাণ রক্ষা করেছিল সেই কাহিনি আজকের অনুষ্ঠানে শুনিয়েছেন আক্কাতাই। তাদের সেবা-শুশ্রুষায় সুস্থ আফ্রিকান গৃহস্থ পরিবারের প্রধান দুই বালককে ওষুধ-পথ্য ও খাদ্যসামগ্রীর মূল্য দিতে চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করলে তিনি তাদের কাছে এ ধরনের সেবাভাব তারা কোথা থেকে প্রাপ্ত হয়েছে জানতে চান। জবাবে তাঁরা নাকি বলে আমরা হিন্দু, ভারতীয়। একে-অপরকে সহায়তা করা ভারতীয় সংস্কৃতি। কাউকে সাহায্য করলে ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার প্রতিদান নেওয়ার বিধান নেই। তারা যা করেছে এটা হিন্দু সংস্কৃতির দর্শন। তাদের কথায় বিস্ময় প্রকাশ করে আফ্রিকান ভদ্রলোক নাকি বলেন, এ ধরনের যে কোনও সংস্কৃতি আছে তা তার জানা ছিল না। এমন পুণ্যভূমির মাটি স্পর্শ করে প্রণাম জানাতে একবার ভারতে আসবেন আফ্রিকান ভদ্রলোক। এ প্রসঙ্গে নিজেদের আইডেনটিটি প্রদর্শন করতে কুণ্ঠা বোধ না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান শান্তা আক্কা।
তাছাড়া ১৯০৫ সালে কলিকাতায় লর্ড কার্জনের এক উক্তির প্রতিবাদে কতটুকু গর্জে উঠেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, সেই গল্পও আজ সংক্রান্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুনিয়েছেন শান্তা আক্কা। এ নিয়ে ওই সালে ‘অমৃত বাজার পত্রিকা’য় বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। তবে ২ ফেব্রুয়ারির সংস্করণে যে বলিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল, তার পর লর্ড কার্জন তাঁর উক্তি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কার্জন বলেছিলেন, তাঁদের ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ। এর প্রতিবাদে সিস্টার নিবেদিতা বলেছিলেন, পৃথিবীতে যদি সর্বশ্রেষ্ঠ কোনও ধর্ম থাকে, তা-হলে তা কেবল হিন্দুধর্ম। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে প্রতিবাদ করতে সংঘবদ্ধ করেছিলেন এক বিদেশিনী নিবেদিতা, বলেন সেবিকা-প্রধান শান্তা আক্কা।
এভাবে সংক্ৰান্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমেরিকা সহ বহু দেশে সংঘটিত নানা ঘটনাবলির প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন বক্তা। তাই এই জাগৃতি সমাজে প্ৰতিষ্ঠিত করে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরে সমাজ তথা দেশকে সুসংগঠিত করতে নারী জাতিকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান শান্তা আক্কা।
শান্তা আক্কা আরও বলেন, দেশ আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে। আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি, পূর্ণ স্বাধীনতা পাইনি। ইংরেজি নববর্ষ পয়লা জানুয়ারি আমরা কেন পালন করি? এটা-তো গোলামী। গোলামী মানসিকতা দেশ ছাড়তে পারছে না। আমাদের নিজস্ব নববর্ষ রয়েছে, এই দিনকে ঘটা করে পালন করতে ডাক দিয়েছেন সেবিকা-প্রধান শান্তা। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে বলেন, সুচ্চরিত্রবান, স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে সামর্থবান, সুসংগঠিত ও সংস্কারিত সমাজ গড়ার প্রধান আধার মাতৃজাতি। তাই এই জাতিকে উজ্জীবিত করতে প্রত্যেক নারীর বৌদ্ধিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটানো খুব জরুরি।
আজকের অনুষ্ঠান শুরু হয় গৈরিক ধ্বজোত্তলন, সেবিকা-প্রার্থনা, একক সংগীত এবং পূর্ণ গণবেশধারিনী (ইউনিফর্ম) সেবিকাদের শারীরিক ব্যায়াম প্রদর্শনের মাধ্যমে। রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির প্রমুখ সঞ্চালিকা শান্তা আক্কার সঙ্গে বক্তৃতামঞ্চে ছিলেন সংগঠনের উত্তর অসম প্রান্ত সঞ্চালিকা ড. নীলিমা গোস্বামী। প্রায় দুই শতাধিক পূর্ণ গণবেশধারিনী সেবিকা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন দুই অখিল ভারতীয় সহ কার্যবাহিকা সুনীতা হালদেকর ও চিত্রাতাই জোশি, প্রান্ত প্রচারিকা তথা অখিল ভারতীয় সহ সম্পর্ক-প্রমুখ নীতা দেবী প্রমুখ।

