নয়াদিল্লি, ৩১ ডিসেম্বর :
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতি বছরের মে মাসে সংঘটিত সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে চীনের মধ্যস্থতার দাবি স্পষ্টভাবে খারিজ করল ভারত। নয়াদিল্লির বক্তব্য, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা নেই এবং ১০ মে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস-এর সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে।
ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, “এই ধরনের দাবি আমরা আগেও খণ্ডন করেছি। ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের কোনও ভূমিকা নেই। বহুবারই স্পষ্ট করা হয়েছে যে, মে মাসের যুদ্ধবিরতি দুই দেশের ডিজিএমও-দের সরাসরি আলোচনার ফল।”
চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে দাবি করেন যে, বেজিং নাকি একাধিক বৈশ্বিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করেছে—তার মধ্যে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাও রয়েছে। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বছরই স্থানীয় যুদ্ধ ও সীমান্ত সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। স্থায়ী শান্তি গড়তে চীন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে।” একইসঙ্গে তিনি মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল, ইরানের পরমাণু ইস্যু, ফিলিস্তিন-ইজরায়েল, কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাতের কথাও উল্লেখ করেন।
ভারতের মতে, চীনের এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারাবাহিক বক্তব্যের পর নতুন করে ‘ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা’র অংশ। ট্রাম্পও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামিয়েছেন।
ভারতীয় মহলে চীনের দাবিকে ভণ্ডামি বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় চীন প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে এবং তিন দিনের সংঘর্ষে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তাও দিয়েছে। ওই সময়ে ভারত পাকিস্তানের গভীরে ১১টি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যেখানে চীনা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া, সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং সম্প্রতি বলেন, চীন এই সংঘর্ষকে কার্যত একটি “লাইভ ল্যাব” হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং পাকিস্তানকে রিয়েল-টাইম ইনপুট দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান যে সামরিক সরঞ্জাম পাচ্ছে তার ৮১ শতাংশই চীনের। অন্য অস্ত্রের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছে চীন।”
২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়। এর জবাবে ভারত অপারেশন সিন্দুর চালিয়ে পাকিস্তানের ভিতরে ন’টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। এরপর ১০ মে দুই দেশের ডিজিএমও-দের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

