গোয়া মুক্তি দিবস আমাদের জাতীয় যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মরণ করিয়ে দেয়: প্রধানমন্ত্রী মোদি

নয়াদিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর: গোয়া মুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক নির্ধারক অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি সেইসব বীর মানুষদের অদম্য সাহস ও আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, যারা অন্যায়কে মেনে নিতে অস্বীকার করে সাহস ও দৃঢ় প্রত্যয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ প্রধানমন্ত্রী মোদি লেখেন, “গোয়া মুক্তি দিবস আমাদের জাতীয় যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা সেইসব মানুষের অদম্য চেতনাকে স্মরণ করি, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁদের আত্মত্যাগ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়, যখন আমরা গোয়ার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।”

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালের এই দিনেই গোয়া পর্তুগিজ শাসন থেকে মুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত সরকার একাধিকবার কূটনৈতিক পথে পর্তুগালকে শান্তিপূর্ণভাবে গোয়া হস্তান্তরের অনুরোধ জানায়। তবে পর্তুগাল সমস্ত আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে গোয়াকে তাদের বিদেশি প্রদেশ হিসেবেই দাবি করতে থাকে। এর ফলেই গোয়া মুক্তি আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং স্থানীয় নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে।

১৯৪৬ সালে ড. রাম মনোহর লোহিয়া এবং ড. জুলিয়াও মেনেজেসের মতো নেতারা প্রকাশ্যে পর্তুগিজ বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ গোয়াবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিরোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে নতুন গতি দেয়।

এরপর গোয়া জুড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, ধর্মঘট এবং নাগরিক অবাধ্যতার কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়ে। পর্তুগিজ প্রশাসন এর জবাবে গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমননীতি চালায়। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী কারাবন্দি হন, আবার অনেককে আত্মগোপনে যেতে হয়। তীব্র দমন-পীড়নের মধ্যেও গোয়ার মানুষের প্রতিরোধের মনোবল ভাঙেনি।

টি. বি. কুনহাকে ‘গোয়ান জাতীয়তাবাদের জনক’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনিই প্রথম সংগঠিতভাবে পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটানোর আন্দোলনের সূচনা করেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী গণআন্দোলনের সময় ফ্রান্সে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং গোয়া মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন।

১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু গোয়া, দমন ও দিউ মুক্ত করার জন্য একটি চূড়ান্ত সামরিক অভিযানের অনুমোদন দেন। ‘অপারেশন বিজয়’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী যৌথভাবে অংশ নেয়। প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিত এই অভিযান মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ১৯৬১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পর্তুগিজ গভর্নর-জেনারেল ম্যানুয়েল আন্তোনিও ভাসালো ই সিলভা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন।

মুক্তির পর ১৯৬১ সালে গোয়াকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরে ১৯৮৭ সালে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।

গোয়া মুক্তির ফলে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ঔপনিবেশিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গোয়া আজ ভারতের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে পর্তুগিজ স্থাপত্য, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস ও উৎসব গোয়ার স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে, যা আর বিদেশি শাসনের প্রতীক নয়, বরং ঐতিহ্যের গর্ব।

Leave a Reply