কৈলাসহর, ১৭ ডিসেম্বর: উত্তর জেলার ধর্মনগর কলেজের প্রথম সেমিস্টারের এক ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বুধবার দুপুরে কৈলাসহরের মনু নদী থেকে। মৃত ছাত্রের নাম দেবজ্যোতি ঘোষ (১৯)। উল্লেখ্য, গতকাল স্নান করতে গিয়ে নদীর জলে তলিয়ে গেছিল ওই যুবক। মৃতদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয় স্বজনেরা। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, দেবজ্যোতি ঘোষ উত্তর জেলার ধর্মনগরের শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা জহর কুমার ঘোষ পেশায় ই-রিকশা চালক। দেবজ্যোতি তার একমাত্র সন্তান এবং ধর্মনগর কলেজের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল সে। মৃত দেবজ্যোতির দাদু অজিত ঘোষের বাড়ি কৈলাসহরের ছনতৈল এলাকায়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর সোমবার দেবজ্যোতি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দাদুর বাড়িতে আসেন। ওইদিন রাতেই অনুষ্ঠান শেষে তিনি দাদুর বাড়িতে থেকে যান। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মনু নদীতে স্নান করতে যান দেবজ্যোতি। তিনি সাঁতার জানতেন না। স্নানের সময় অসাবধানতাবশত গভীর জলে তলিয়ে যান তিনি।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কৈলাসহর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স, এনাডিআরএফ ও টিএসআর বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তবে মঙ্গলবার দিন-রাতব্যাপী তল্লাশি চালিয়েও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বুধবার ছনতৈল এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী অজয় দেবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কৈলাসহর মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে বিশেষ ডুবুরি এনে উদ্ধার কাজ জোরদার করার দাবি জানায়। মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে চণ্ডীপুর এলাকা থেকে সাতজন বিশেষ ডুবুরি এনে মনু নদীতে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। উদ্ধারকালে ঘটনাস্থলে মহকুমা প্রশাসনের পক্ষে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল দশটা থেকে শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযানের পর বুধবার দুপুর প্রায় একটার সময় গৌরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কামরাঙ্গাবাড়ি এলাকায় মনু নদী থেকে দেবজ্যোতি ঘোষের মৃতদেহ উদ্ধার করেন ডুবুরিরা।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দেববর্মা জানান, ঘটনার সময় দেবজ্যোতির সঙ্গে আগরতলার দুই যুবক ও স্থানীয় এক যুবকসহ মোট চারজন নদীতে স্নান করতে নেমেছিলেন। চারজনই সমবয়সি এবং পরস্পরের নিকট আত্মীয় ছিলেন।
মৃতদেহ উদ্ধারের খবরে এলাকায় কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে যায়। এদিকে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই দেবজ্যোতির বাবা-মা দুজনেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

