গুয়াহাটি, ১৭ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মঙ্গলবার তিনি দাবি করেন, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তাঁর কথায়, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে বারবার উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারত থেকে আলাদা করে বাংলাদেশে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভারত একটি বিশাল দেশ, পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এমন কথা ভাবতেই পারে?”
সাথে তিনি যোগ , বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা “খারাপ” এবং তাদের “অতিরিক্ত সাহায্য করা উচিত নয়”। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেন বেশি সাহায্য না করি এবং তাদের একটি শিক্ষা দিই যে ভারতের প্রতি এ ধরনের আচরণ করলে আমরা চুপ করে থাকব না।”
অসম মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আসে বাংলাদেশের নবগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-র এক শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লার বক্তব্যের পর। সোমবার হাসনাত আবদুল্লা বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে “অস্থিতিশীল” করার চেষ্টা করে, তবে ঢাকার উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে “বিচ্ছিন্ন” করে দেওয়া। পাশাপাশি তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন দেওয়ার কথাও বলেন বলে অভিযোগ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কীভাবে অস্থিতিশীল করা যায় সে প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লা দাবি করেন, সিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ওই অঞ্চল “ভৌগোলিকভাবে দুর্বল”। ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত এই সিলিগুড়ি করিডরই উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের একমাত্র স্থলসংযোগ।
এর আগেও চলতি বছরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছিলেন, যারা নিয়মিতভাবে ভারতের ‘চিকেনস নেক’ নিয়ে হুমকি দেয়, তাদের মনে রাখা উচিত—বাংলাদেশেরও দুটি এমন সংকীর্ণ করিডর রয়েছে, যা ভারতেরটির তুলনায় “অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ”।
এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, বাংলাদেশের দুটি নিজস্ব ‘চিকেনস নেক’ রয়েছে এবং দুটিই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তিনি জানান, প্রথমটি হলো ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর বাংলাদেশ করিডর, যা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম গারো হিলস পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পথে সামান্য বিঘ্ন ঘটলেই বাংলাদেশের পুরো রংপুর বিভাগ দেশটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দ্বিতীয়টি হলো ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম করিডর, যা দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই করিডরটি ভারতের ‘চিকেনস নেক’-এর থেকেও ছোট এবং এটিই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী ও রাজনৈতিক রাজধানীর মধ্যে একমাত্র সংযোগ পথ।

