আম্মান, ১৬ ডিসেম্বর : ভারত ও জর্ডনের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। মঙ্গলবার আম্মানে আয়োজিত ভারত–জর্ডন বিজনেস ফোরামে যৌথভাবে ভাষণ দিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতা ব্যবসা-টু-ব্যবসা যোগাযোগ বাড়ানো এবং বিদ্যমান সম্ভাবনাকে বাস্তব আর্থিক বৃদ্ধিতে রূপান্তরের উপর গুরুত্ব দেন।
এই ফোরামে জর্ডনের ক্রাউন প্রিন্স ও বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তথা বিনিয়োগমন্ত্রী হুসেইনের পাশাপাশি দুই দেশের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেন, জর্ডনের বিস্তৃত ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট নেটওয়ার্ক এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও আরও বিস্তৃত অঞ্চলের মধ্যে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা সম্ভব।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গভীর সভ্যতাগত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে ভারত ও জর্ডনের মধ্যে একটি দৃঢ় সমসাময়িক অংশীদারিত্ব রয়েছে। আঞ্চলিক বাজারগুলির মধ্যে সংযোগকারী সেতু হিসেবে জর্ডনের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আগামী পাঁচ বছরে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত খুব শিগগিরই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে। তিনি জর্ডনের সংস্থাগুলিকে ভারতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশাল ভোক্তা বাজার, সম্প্রসারিত উৎপাদন ক্ষেত্র এবং স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ নীতিগত পরিবেশ থেকে তারা লাভবান হতে পারবে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক বাজারের জন্য দু’দেশ একসঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সাপ্লাই চেন অংশীদার হিসেবেও কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, আইটি, ফিনটেক, হেলথ-টেক এবং অ্যাগ্রি-টেক খাতে সহযোগিতার সুযোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের স্টার্টআপগুলিকে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল ও মেডিক্যাল ডিভাইস খাতে দক্ষতা এবং জর্ডনের কৌশলগত অবস্থান মিলিয়ে জর্ডনকে পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
এছাড়াও কৃষি, কোল্ড চেন, ফুড পার্ক, সার, পরিকাঠামো, অটোমোবাইল, গ্রিন মোবিলিটি এবং ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। টেকসই উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি নবীকরণযোগ্য শক্তি, গ্রিন ফাইন্যান্সিং, লবণাক্ত জল বিশুদ্ধকরণ এবং জল পুনর্ব্যবহারে যৌথ উদ্যোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
ফোরামে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ শিল্প, সার, কৃষি, নবীকরণযোগ্য শক্তি, বস্ত্র, লজিস্টিক্স, অটোমোবাইল, প্রতিরক্ষা এবং উৎপাদন খাতের বহু ব্যবসায়িক নেতা অংশ নেন। এছাড়াও, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ইতিমধ্যেই সমঝোতা স্মারক থাকা ফিক্কি এবং জর্ডন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরাও প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন।

