নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর : ভয়াবহ দূষণে ঢেকে গিয়েছে জাতীয় রাজধানী। সোমবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে দিল্লির বায়ু মান সূচক দাঁড়ায় ৪৫৪, যা ‘চরম’ পর্যায়ে রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ‘সমীর’ অ্যাপের তথ্য জানাচ্ছে। রবিবার এই সূচক ছিল ৪৬১, যা চলতি ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বায়ুগুণমান হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
ঘন কুয়াশা ও ধোঁয়াশার জেরে দিল্লিগামী অন্তত পাঁচটি বিমান অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবল মহাতারকা লিওনেল মেসি–র দিল্লি সফরেও। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, মুম্বই থেকে দিল্লির উদ্দেশে তাঁর বিমান ঘন কুয়াশার কারণে কয়েক ঘণ্টা দেরিতে উড়ে আসে। সকাল ১১টার আগেই দিল্লিতে পৌঁছনোর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দুপুর ২টার অনেক পরে রাজধানীতে পৌঁছন।
এর আগে সোমবার সকালেই দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য একটি ট্রাভেল অ্যাডভাইসারি জারি করে। সেখানে জানানো হয়, “ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যাত্রীদের অসুবিধা কমাতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছি। সর্বশেষ আপডেটের জন্য যাত্রীদের নিজ নিজ এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।”
একাধিক এয়ারলাইনও সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কবার্তা জারি করেছে। এক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, কম দৃশ্যমানতা ও কুয়াশার কারণে দিল্লিতে বিমান চলাচলের সময়সূচিতে প্রভাব পড়তে পারে। যাত্রীদের যাত্রার আগে ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে ফ্লাইটের অবস্থা যাচাই করার অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, রাস্তার দৃশ্যমানতা কম থাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছতে অতিরিক্ত সময় হাতে রেখে বেরোতে বলা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়াও যাত্রীদের উদ্দেশে এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছে, দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে ফ্লাইটের অবস্থা যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘন ধোঁয়াশার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সিপিসিবি-র তথ্য অনুযায়ী, অক্ষরধামে বায়ু মান সূচক ছিল ৪৯৩, বারাপুল্লা ফ্লাইওভারে ৪৩৩ এবং বারাখাম্বা রোডে ৪৭৪। সর্বত্রই দৃশ্যমানতা ছিল অত্যন্ত কম।
উল্লেখ্য, বায়ু মান সূচক শূন্য থেকে ৫০ হলে তা ‘ভাল’, ৫১–১০০ ‘সন্তোষজনক’, ১০১–২০০ ‘মাঝারি’, ২০১–৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১–৪০০ ‘অত্যন্ত খারাপ’ এবং ৪০১–৫০০ ‘চরম’ হিসেবে ধরা হয়।
দূষণের মারাত্মক পরিস্থিতির কারণে শনিবারই বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা কমিশন গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের চতুর্থ স্তর কার্যকর করেছে, যা সর্বাধিক কঠোর ব্যবস্থা। এর আওতায় দিল্লি-এনসিআর জুড়ে সব ধরনের নির্মাণ ও ভাঙচুরের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া দিল্লি সরকার সরকারি ও বেসরকারি দফতরের ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিয়েছে। স্কুলগুলিতেও (দশম শ্রেণি ছাড়া একাদশ পর্যন্ত) হাইব্রিড মোডে—অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে—পাঠদান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

