রেগা প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়ার তীব্র নিন্দা প্রদেশ কংগ্রেসের

আগরতলা, ১৩ ডিসেম্বর :ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস, স্বাধীন ভারতে জাতীয় কংগ্রেস সরকার ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিসরের কৃতিত্ব এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মণীষীদের অবদান মুছে দেওয়ার লক্ষ্যে আরএসএস–বিজেপি ও মোদি–শাহ নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজনৈতিক প্রকল্পের আরও এক নগ্ন প্রকাশ বলে অভিযোগ করল প্রদেশ কংগ্রেস। তাদের মতে, ‘রেগা প্রকল্প’ থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ।

প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য, নতুন নামকরণের মাধ্যমে দেশবাসীর কী মঙ্গল সাধিত হবে বা এর ফলে কী ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অথচ জাতীয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ‘রেগা’ প্রকল্প যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তা দেশবাসীর কাছে সুবিদিত।

কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই নরেন্দ্র মোদি রেগা প্রকল্পকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন। তিনি একে ‘গাড্ডা খোঁড়ার প্রকল্প’ এবং মানুষকে অলস করে তোলার উদ্যোগ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এরপর থেকেই প্রকল্পটি দুর্বল করার ধারাবাহিক চেষ্টা চলছে। দেশজুড়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে বলে দাবি কংগ্রেসের।

তাদের আরও অভিযোগ, ডিজিটাল ব্যবস্থার নামে আধার ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযোগ বাধ্যতামূলক করে কোটি কোটি নথিভুক্ত রেগা শ্রমিকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এখনও তালিকার বাইরে রয়েছেন। পাশাপাশি, কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া মজুরি আটকে রেখে কার্যত প্রকল্পটি বন্ধ করার চেষ্টা চলছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

প্রদেশ কংগ্রেস জানায়, বিজেপি-বিরোধী সব দলের পক্ষ থেকে রেগা প্রকল্প শক্তিশালী করার দাবিতে বছরে ন্যূনতম ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরির দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি নিজেও নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যেমন আমাদের রাজ্যে বছরে ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৩৪০ টাকা মজুরি। কিন্তু বাস্তবে সেই সব প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত।

চলতি সংসদ অধিবেশনে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ সালে ৯০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ সালে ৮৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আরও কমে ৮৫ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এর ফলে দেশে গড়ে রেগার কাজ নেমে এসেছে বছরে মাত্র ৪০–৪২ দিনে। আমাদের রাজ্যে তা আরও কমে ৩২–৩৪ দিনে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কাছে এখনও প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বকেয়া মজুরি আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রদেশ কংগ্রেসের মতে, মজুরি বৃদ্ধি বা বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট ঘোষণা না রেখে শুধু নাম পরিবর্তন ও বছরে ১২৫ দিনের কাজের কথা বলা আসলে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’—যার মাধ্যমে মোদি সরকারের ধারাবাহিক প্রতারণাই সামনে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস রেগা প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা অবিলম্বে রেগা প্রকল্পে পুনরায় মহাত্মা গান্ধীর নাম যুক্ত করা, বছরে অন্তত ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করা, ডিজিটাল কারুকার্যের নামে তালিকা থেকে বাদ পড়া সব যোগ্য শ্রমিককে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা, রাজ্যের সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের রেগা তালিকাভুক্ত করা, রাজ্যে দৈনিক ন্যূনতম ৫০০ টাকা মজুরি চালু করা এবং কাজ শেষে দ্রুত প্রকৃত প্রাপকদের মজুরি পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

Leave a Reply