উত্তর ভারতে ২০০ সমন্বিত বিস্ফোরণের চক্রান্তে জড়িত জেএম

নয়াদিল্লি, ২১ নভেম্বর: দিল্লির লালকেল্লার কাছে ১০ নভেম্বরের বিস্ফোরণ-ঘটনার তদন্তে এক বড়ো অগ্রগতি মিলেছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম)। তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের বোমা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিল জেএম-এর এক গুরুত্বপূর্ণ অপারেটিভ।

তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা মোট ২০০টি শক্তিশালী বোমা তৈরি করছিল, যা একযোগে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এই চক্রান্তের জন্য পাকিস্তানের আইএসআই একটি বিশেষভাবে নির্বাচিত জেএম সদস্যকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিল, যিনি হানজুল্লা নামে পরিচিত।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হানজুল্লা জেএম-এর বড়ো পদাধিকারী। জম্মু ও কাশ্মীরে জেএম-এর যে পোস্টারগুলি পাওয়া যায়, সেখানে “কমান্ডার হানজুল্লা ভাই”-এর নাম উল্লেখ থাকায় তদন্তকারীরা সন্দেহের তীর ঘোরান তাঁর দিকে। সেই সূত্র ধরেই ফারিদাবাদ মডিউলের গ্রেফতার এবং ২,৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জব্দ সম্ভব হয়।

হানজুল্লা নিয়মিত যোগাযোগ রাখত মূল অভিযুক্ত মাওলভি ইরান আহমেদের সঙ্গে। আহমেদই তাকে ফারিদাবাদ মডিউলের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। এরপর অভিযুক্তদের বিস্ফোরক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তদন্তকারীদের দাবি, মডিউলটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরির চেষ্টা করছিল। পরিকল্পনা ছিল—দিল্লি, গুরগাঁও ও ফারিদাবাদজুড়ে ২০০টি বিস্ফোরণ একসঙ্গে ঘটানো। এই কারণে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংগ্রহ করা হয়েছিল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় লালকেল্লার কাছে সীমিত মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটে। অভিযুক্তদের ব্যবহৃত সাদা হুন্ডাই i20 গাড়িটি শাকিল নামে আরেক সদস্য ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, অভিযুক্তরা নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ এবং কোড ভাষা ব্যবহার করত। তাদের মধ্যে “বিরিয়ানি” শব্দটি ব্যবহৃত হত বিস্ফোরক বোঝাতে। বেশিরভাগ অভিযুক্ত পেশায় ডাক্তার হওয়ায় তারা দীর্ঘদিন নিরাপত্তা সংস্থার নজরের বাইরে ছিল।

মডিউলের মূল নিয়োগকারী ডা. শাহিন বহুবার জম্মু-কাশ্মীর যাতায়াত করেও সন্দেহের উদ্রেক করেননি। সেখানে তিনি আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করতেন এবং পেশাদারদের নিয়োগের নির্দেশ পেতেন, যাতে একটি “হোয়াইট-কলার” মডিউল গড়ে তোলা যায়।

পুলিশ এখন হানজুল্লার অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। তদন্তে জানা গেছে, ফারিদাবাদ মডিউলটি একদিকে কাশ্মীরের আহমেদ এবং অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত আরেক হ্যান্ডলারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল।

তদন্তকারীদের মতে, যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতো, তাহলে তার পরিণতি হতো “অকল্পনীয়”।