পাটনা, ১৪ নভেম্বর : দুই দফা ভোটগ্রহণ শেষে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হচ্ছে বিহারের ২৪৩ আসনের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক ফিগার ১২২। গণনার সকালকে ঘিরে প্রস্তুতি, বিতর্ক ও ভবিষ্যদ্বাণীর মূল দিকগুলো দেখে নেওয়া যাক।
কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এনডিএ বিহারেও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার একাধিকবার জোট পাল্টালেও তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শাসনব্যবস্থা ও কল্যাণমূলক প্রকল্প ছিল এই নির্বাচনের বড় আলোচ্য। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইমেজ ও প্রচারও এনডিএর মূল শক্তি।
আরজেডি–কংগ্রেস মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তরুণ তেজস্বী যাদব নিজেকে বড় পরিবর্তনকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার প্রধান প্রতিশ্রুতি, প্রতি পরিবারে একটি করে চাকরি। রাজনীতির ময়দানে নতুন বিকল্প হিসেবে হাজির ছিলেন কৌশলবিদ থেকে নেতা হওয়া প্রশান্ত কিশোরও। সব দলের ক্ষেত্রেই প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার ও প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জাতপাতের সমীকরণ।
ইভিএম ও ভিভিপ্যাট রাখা হয়েছে দ্বিগুণ তালাবদ্ধ ‘স্ট্রং রুমে’। ভিতরের নিরাপত্তায় রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, বাইরে রাজ্য পুলিশ। ৪৬টি গণনা কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি নজরদারি করা হচ্ছে।
বেশিরভাগ এক্সিট পোলই জেডিইউ–বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএকে দিয়েছে আরামদায়ক সংখ্যা—১২১ থেকে ২০৯ আসনের পূর্বাভাস। তবে তেজস্বী যাদব এসব অনুমানকে নস্যাৎ করে দাবি করেছেন, মহাগঠবন্ধনই গড়বে সরকার, তাদের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এক্সিট পোল ভুল হয়েছিল; ২০১৫-তেও ফলাফল অনুমান থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল।
এক্সিট পোলগুলো প্রশান্ত কিশোরের নবগঠিত জন সুরাজ পার্টিকে ৫টির বেশি আসন দেয়নি। পিকে-র দাবি—তিনি হয় সরকার গড়বেন, নয় তো ১০-এর নিচে থাকবেন। তরুণদের ইস্যু ও বেকারত্বকে সামনে রেখে তিনি লড়াই করেছেন। অনিশ্চিত ফল এলে ‘কিংমেকার’ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা ছিল।
অন্তত দুই বড় সমীক্ষা (অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া ও পিপল’স পালস) দেখিয়েছে—জয়ের পূর্বাভাস এনডিএর দিকে ঝুঁকলেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় তেজস্বী যাদব। অ্যাক্সিস–এর জরিপে তেজস্বীর জনপ্রিয়তা ৩৪%, নিতীশ কুমারের ২২%।
স্বাধীনতার পর বিহারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৭% ভোটদান। এমন উচ্চ ভোটদানের হার অন্তত তিনবার ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে, এ কারণে এনডিএর জন্য ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
আরজেডি অভিযোগ তোলে—সাসারামে “ইভিএম বোঝাই” একটি ট্রাক সন্দেহজনকভাবে প্রবেশ করেছে এবং সিসিটিভি নাকি দুপুর ২টা থেকে বন্ধ ছিল। রোহতাসের জেলাশাসক উদিতা সিং এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ট্রাকে ছিল খালি স্টিলের বাক্স, ইভিএম নয়।
“জনমত চুরি হলে মানুষ রাস্তায় নামবে”, নেপাল–বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে গণনা-পূর্ব উত্তাপে আরও আগুন জ্বালায় আরজেডি এমএলসি সুনীল সিং-এর মন্তব্য। বিহার পুলিশের মহানির্দেশক তার বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ দেন। তেজস্বীও অভিযোগ করেন, এনডিএ ভোটগণনা ‘স্লো’ করতে পারে ও “গণতন্ত্র হত্যার” চেষ্টা করবে।
এক্সিট পোলের ওপর ভর করে এনডিএ নেতারা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। বিজেপি কর্মীরা ইতিমধ্যেই ৫০১ কেজি লাড্ডু তৈরির অর্ডার দিয়েছেন গণনার “প্রসাদ” হিসেবে।
যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে রাজধানী পাটনায় বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ।
সব নজর এখন শুক্রবারের ফলাফলের দিকে। নিতীশ–মোদির এনডিএ কি ক্ষমতা ধরে রাখবে, নাকি তরুণ তেজস্বীর হাতে উঠবে বিহারের শাসনভার?

